পেগাসাস ফোন হ্যাকিং কাণ্ড নিয়ে এবার জনস্বার্থে মামলা করা হয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে।
ইসরায়েলের স্পাইওয়্যার পেগাসাসের মাধ্যমে দেশের নেতা-মন্ত্রী থেকে শুরু করে সাংবাদিক, শিল্পপতি, সমাজকর্মীসহ নাগরিকদের ওপর নজরদারি করার বিষয়ে একটি তদন্তের দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার রিট পিটিশন করেছেন আইনজীবী এম এল শর্মা।
পিটিশনে বলা হয়েছে, পেগাসাস কেলেঙ্কারি গুরুতর উদ্বেগের বিষয় এবং ভারতীয় গণতন্ত্র, দেশের সুরক্ষা এবং বিচার বিভাগের ওপর আক্রমণ। এ ধরনের নজরদারির ব্যাপক ব্যবহার নৈতিকভাবে বিশৃঙ্খলাজনক। জাতীয় সুরক্ষার ওপর এই সফটওয়্যারটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরুর আগের রাতে গত রোববারই পেগাসাসের বিষয়টি সামনে আসে। প্যারিসের একটি স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ‘ফরবিডেন স্টোরিজ’ নজরদারি চালনোর গোটা ঘটনাটি সামনে আনে। এরপর একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমসহ বিশ্বের ১৭টি পত্রপত্রিকায় দাবি করা হয়, দুই মন্ত্রী, একাধিক বিরোধী নেতা, আইনজীবী, সাংবাদিক, বিশিষ্ট শিল্পপতিসহ বিখ্যাত ৪০ জনের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে পেগাসাস স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে।
এই তালিকায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, নির্বাচনী রণকৌশলী প্রশান্ত কিশোরের মতো বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ওপর নজরদারি চালানোর অভিযোগ ওঠে।
ইসরায়েলি সংস্থা এনএসও গ্রুপের তরফে জানানো হয়েছে, কোনও ব্যক্তির ওপর প্রয়োগের জন্য নয়, তারা কেবল সরকারের কাছেই এই প্রযুক্তি বিক্রি করে। এরপরই লোকসভা ও রাজ্যসভাতেও পেগাসাস-কাণ্ড ঘিরে সরব হয়েছে বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, এখতিয়ারের বাইরে বেরিয়ে কেন্দ্র সাধারণ মানুষের গতিবিধিতে নজর রাখছে।
এদিন আইনজীবী এম এল শর্মা সুপ্রিম কোর্টে আবেদনে জানান, প্রশাসন পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে যে নজরদারি চালিয়েছে, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে যেন তদন্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, কলকাতায় ২১ জুলাইয়ের শহীদ মঞ্চ থেকে দেয়া ভাষণে পেগাসাস হ্যাকিং নিয়ে সরব হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি হাত জোড় করে সুপ্রিম কোর্টের কাছে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করে তদন্তের নির্দেশ দেয়ার অনুরোধ জানান।
তিনি বলেছিলেন, ‘সম্মানীয় শীর্ষ আদালতের কাছে আমার বিনীত আবেদন, দেশের সকলে আপনাদের ভীষণ সমীহ করে। যখন বিচারপতিদের ফোনও ট্যাপ করা হচ্ছে, তখন আপনারা কি একটা স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করতে পারেন না? আমি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের কাছে এই আবেদন জানাচ্ছি।’
এরপরই বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে পেগাসাস নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়ে জনস্বার্থে মামলা করা হয়েছে।