আফগানিস্তানের ধর্মভিত্তিক সশস্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন তালেবান দেশটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা জেনারেল মার্ক এ মাইলি। আফগানিস্তানের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে বুধবার এ আভাস দেন তিনি।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, আফগানিস্তানের ৪১৯টি জেলার মধ্যে গত কয়েক মাসে কমপক্ষে ২১০টি জেলা দখল করেছে তালেবান।
রাজধানী কাবুলসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে ব্যস্ত আফগান নিরাপত্তা বাহিনী। এ সুযোগে দেশের অন্যান্য অঞ্চল একরকম বিনা বাধাতেই দখল করে নিচ্ছে তালেবান যোদ্ধারা; আরও পিছু হটতে বাধ্য করছে আফগান সেনাদের।
যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মাইলি প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বর্তমানে আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের অর্ধেকের বেশি রাজধানী শহর দখলের চেষ্টা করছে তালেবান। মূলত কাবুলসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে চায় গোষ্ঠীটি।
মাইলি বলেন, ‘তালেবান যে আফগানিস্তানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে, সে শঙ্কা উড়িয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। গোষ্ঠীটির দখলকৃত অঞ্চলের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। শেষ অবধি কী ঘটে, সেটাই দেখার অপেক্ষা।’
তিনি আরও বলেন, ‘কৌশলগতভাবে তালেবান ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছে। তালেবানের বিজয় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমরা। গোষ্ঠীটিও নিজেদের বিজয় অনিবার্য বলে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে।’
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটোর ২০ বছরের যৌথ অভিযান প্রায় শেষের দিকে। বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের সুযোগে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে হটিয়ে দেশের বড় অংশ দখল করে নিতে শুরু করে তালেবান।
৩১ আগস্টের মধ্যে পাঁচ মাসে আফগানিস্তান ছাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের আড়াই থেকে সাড়ে তিন হাজার এবং ন্যাটোভুক্ত বিভিন্ন দেশের আরও প্রায় সাত হাজার সেনা। এরই মধ্যে আফগানিস্তানে সামরিক মিশন আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ করেছে যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ইতালি; শেষ সেনাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে পোল্যান্ড; ৯০ শতাংশ সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম প্রত্যাহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আফগানিস্তান ছেড়েছেন দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন মিশনের প্রধান সেনা কমান্ডার জেনারেল স্কট মাইলার। তার প্রস্থান যুক্তরাষ্ট্রের আফগান মিশনের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও কূটনীতিকদের সুরক্ষা আর কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থেকে যাবে মাত্র ৬৫০ জন আমেরিকান সেনা।
এর আগে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের ফলে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধের শঙ্কা জানিয়েছিলেন জেনারেল স্কট মাইলার।