আফগানিস্তানে সংঘর্ষ বন্ধে তালেবান রাজনৈতিক নিষ্পত্তি সমর্থন করে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা।
রোববার এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা জানান বলে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
আসন্ন ঈদুল আজহার আগে আখুন্দজাদা বলেন, ‘সামরিক অর্জন ও অগ্রগতি সত্ত্বেও ইসলামিক আমিরাত আফগানিস্তানে তীব্রভাবে রাজনৈতিক সমাধান চায়।’
তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানে ইসলামি ব্যবস্থা কায়েমে সব সম্ভাবনাই রয়েছে। এ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে শান্তি ও নিরাপত্তা আনবে ইসলামিক আমিরাত।’
তালেবান নেতা বলেন, ‘আফগানিস্তানে চলমান সমস্যা সমাধানে অঙ্গীকারবদ্ধ তালেবান। তবে বিরোধী পক্ষ অযথাই সময়ক্ষেপণ করছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বার্তা পরিষ্কার। বিদেশিদের ওপর নির্ভর না করে আমাদের সমস্যা আমাদেরই সমাধান করা উচিত।
‘এর মাধ্যমে বিদ্যমান সংকট থেকে আমরা দেশকে উদ্ধার করতে পারব।’ আফগানিস্তান ঘিরে তালেবানের সর্বোচ্চ নেতার বক্তব্য এমন সময় এলো যখন দেশটির সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কাতারের রাজধানী দোহায় আলোচনায় বসেছেন সংগঠনটির নেতারা।
আলোচনায় আফগান সরকারের প্রতিনিধিদের মধ্যে রয়েছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই, সাবেক প্রধান নির্বাহী আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ।
আফগান সরকারের প্রতিনিধিদলের মুখপাত্র নাজিয়া আনওয়ারি শনিবার বলেছিলেন, ‘আমরা আশা করছি, আলোচনার মাধ্যমে দুই পক্ষ শিগগিরই সমাধানে পৌঁছবে। আর আমরা আফগানিস্তানে টেকসই শান্তি পরিস্থিতি দেখতে পাব।’
আলোচনায় বসার আগে তালেবানের মুখপাত্র মুহাম্মদ নাঈম আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা আলোচনা ও সমঝোতার জন্য প্রস্তুত।
‘আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান আমাদের অগ্রাধিকার। আলোচনার অপর পক্ষ সংকট নিরসনে আন্তরিক হবে বলে আশা করছি।’
দীর্ঘ প্রতীক্ষিত শান্তি আলোচনা পুনরুজ্জীবিত করতে কয়েক মাস ধরে দোহায় বৈঠকে বসছেন আফগান সরকার ও তালেবানের প্রতিনিধিরা।
তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রত্যাশিত মীমাংসায় পৌঁছতে পারেনি উভয় পক্ষ।
বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের শেষ সময়ে আফগানিস্তানের একের পর এক অঞ্চল তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় শান্তিচুক্তির সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে এসেছে।
দোহায় রোববার দুই পক্ষের ফের বৈঠকের কথা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো আফগানিস্তান থেকে তাদের সেনা সরানোর শেষ ধাপে বেশ কয়েকটি অঞ্চল নিজেদের দখলে নিয়েছে তালেবান।
ধারণা করা হচ্ছে, আফগানিস্তানের ৪০০ জেলার প্রায় অর্ধেক, বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বর্ডার ক্রসিং এ মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণ করছে তালেবান। এ ছাড়া প্রধান কয়েকটি প্রাদেশিক রাজধানীও অবরোধ করে রেখেছে সংগঠনটি।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে হামলা চালানো জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে তালেবানের সম্পর্কের জেরে আফগানিস্তানে সে সময় সামরিক অভিযান চালায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো।
মিত্র বাহিনীর সম্মিলিত অভিযানে ওই বছরই আফগানিস্তানের ক্ষমতা থেকে তালেবানকে উৎখাত করা হয়।
তালেবান উৎখাত হলেও আফগানিস্তানে দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর অবস্থান করে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র ন্যাটোভুক্ত দেশের সেনারা।
চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বরের আগেই আফগানিস্তান থেকে সব সেনা সরাতে নিজেদের সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এপ্রিলে বাইডেনের ওই ঘোষণার পর ন্যাটোর অন্য সদস্যরাষ্ট্রগুলোও আফগানিস্তান থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহারের কথা বলে এবং ধীরে ধীরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি থেকে বিদেশি সেনা সরতে শুরু করে।
এরই ধারাবাহিকতায় ১ জুলাই বিদেশি সেনাদের গুরুত্বপূর্ণ বাগরাম বিমানঘাঁটি ছেড়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র বাহিনী।
সেপ্টেম্বর নয়, ৩১ আগস্টের মধ্যেই আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সব সেনা প্রত্যাহারের এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।