ইউরোপের পশ্চিমাঞ্চলে কয়েক দশকের মধ্যে ভয়াবহতম বন্যায় প্রাণ গেছে কমপক্ষে ১২৫ জনের। শুধু জার্মানিতেই এ সংখ্যা ১০৬। বেলজিয়ামে মারা গেছে প্রায় ২০ জন।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবার্গ আর সুইজারল্যান্ডও।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, জার্মানির রাইনল্যান্ড-প্যালেটিনেট প্রদেশে ৬৩ আর নর্থ রাইন-ওয়েস্টফ্যালিয়ায় ৪৩ জন মারা গেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, রেকর্ড অতিবৃষ্টিতে বিভিন্ন নদীতে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ওপর। তলিয়ে গেছে আশপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
বন্যায় জার্মানিতে এখনও নিখোঁজ ১ হাজার ৩০০-এর বেশি মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কাজ করতে রাষ্ট্রনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল।
দেশে আগামী মঙ্গলবার জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার ডে ক্রু। জানিয়েছেন, বন্যায় হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে। দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ হতে পারে এ বন্যা।
বন্যার পেছনে অনেক কারণ থাকলেও মূলত দায়ী করা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে অতি বৃষ্টিকে।
শিল্প বিপ্লব শুরুর পর থেকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়েছে এক দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণে বিভিন্ন দেশ ঐক্যবদ্ধ ব্যবস্থা না নেয়ায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।
জার্মানিতে বন্যায় নিখোঁজ হাজারও মানুষকে সন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে যোগ দিয়েছে ১৫ হাজার পুলিশ, সেনা ও জরুরি সেবাদানকারী সদস্য।
দেশটিতে বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নর্থ রাইন-ওয়েস্টফ্যালিয়া ও রাইনল্যান্ড-প্যালেটিনেট প্রদেশ। ভেঙে পড়েছে রাস্তাঘাট, সেতু, বেশ কয়েকটি ভবন। সর্বস্ব হারিয়েছে অনেক মানুষ।
নর্থ রাইন-ওয়েস্টফ্যালিয়ার রেইনব্যাশের বাসিন্দা গ্রিগর জেরিকো বলেন, ‘যেদিকে তাকাই, ধ্বংসস্তূপ আর ময়লা। বাড়িঘর ভেঙে রাস্তার ওপর পড়ে আছে। মানুষজন রাস্তায় বসে আছে, কাঁদছে।
‘খুব দুঃখজনক। ঘরবাড়ি হারিয়েছে তারা, তাদের গাড়ি বন্যার পানির তোড়ে কোথায় ভেসে গেছে। শহর দেখে মনে হচ্ছে এখানে কোনো যুদ্ধ হয়ে গেছে।’
একই শহরের আরেক বাসিন্দা আন্সগার রেবেইন জানান, নদীতে দ্রুত পানি বাড়তে দেখে প্রাণ বাঁচাতে তৎক্ষণাৎ বাড়ি থেকে বের হয়ে যান তিনি।
রেবেইন বলেন, ‘একদিক থেকে নদী উপচে পানিতে ভেসে যাচ্ছিল চারপাশ, তার ওপর পাহাড়ের দিক থেকেও ঢল নেমেছিল। মাত্র দুই মিনিট লেগেছে সবকিছু ভেসে যেতে। আমরা জানালা দিয়ে বের হয়ে ওপরের দিকে গিয়ে নিজেদের প্রাণ বাঁচিয়েছি।’
বেলজিয়ামে বন্যায় নিখোঁজ ২০ জন। ভারভিয়ার্স শহরে বন্যায় গাড়ি ভেসে যাওয়ার একটি ফুটেজ প্রকাশিত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়া বাসিন্দাদের অনুপস্থিতিতে লুটপাট রোধে শহরজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
দেশটির তৃতীয় বৃহৎ শহর লিজ থেকে বাসিন্দাদের বৃহস্পতিবার সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। যারা শহর ছাড়তে পারেননি, তাদের ভবনের ওপর তলায় চলে যেতে বলেছে প্রশাসন।
নেদারল্যান্ডসে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। তবে ম্যুজ নদীর উপকূলবর্তী বিভিন্ন শহর ও গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দাকে সরে যেতে বলা হয়েছে।
সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্ন হয়ে বয়ে যাওয়া ম্যুজ নদীতে শুক্রবার সেকেন্ডে রেকর্ড ৫৬০ ঘনমিটার পানি বয়ে গেছে।