পাকিস্তানের সঙ্গে প্রধান বর্ডার ক্রসিং স্পিন বলদাক পুনর্দখলের চেষ্টায় তালেবান যোদ্ধাদের সঙ্গে ভয়াবহ সংঘর্ষ চলছে আফগানিস্তানের সেনাবাহিনীর।
বুধবার তালেবানের দখলে যাওয়া বর্ডার ক্রসিংটি নিয়ন্ত্রণে নিতে শুক্রবার সংঘর্ষ শুরু হয় বলে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো আফগানিস্তান থেকে সেনা সরানোর প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই তালেবান বিভিন্ন অঞ্চল নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়।
বিশেষ করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত দখলে হামলা চালাচ্ছে তালেবান।
আফগানিস্তানের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত এরই মধ্যে তালেবানের দখলে চলে গেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাকিস্তান সীমান্তে আফগান সেনাবাহিনী সঙ্গে ভয়াবহ সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন তালেবান যোদ্ধা আহত হয়। তাদের সীমান্তবর্তী পাকিস্তানি এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
সীমান্ত থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে পাকিস্তানের চমন শহর থেকে মোল্লা মোহাম্মদ হাসান নামে তালেবানের এক যোদ্ধা এএফপিকে বলেন, ‘সংঘর্ষে আমাদের এক যোদ্ধা নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন।’
পাকিস্তানের চমন শহরে এক হাসপাতালে আহত তালেবান যোদ্ধা। ছবি: এএফপি
স্পিন বলদাক সীমান্তে সংঘর্ষ চলাকালে শুক্রবার নিহত হন বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ফটোসাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকি। ২০১৮ সালে পুলিৎজার পুরস্কার জিতেছিলেন ভারতীয় নাগরিক দানিশ।
আফগানিস্তানের জন্য স্পিন বলদাক সীমান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পুরোপুরি স্থলবেষ্টিত আফগানিস্তান বাদাম, শুকনা খাবারসহ অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য এ সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে রপ্তানি করে। অন্যদিকে পাকিস্তান থেকে তৈরি মালামাল এ সীমান্ত দিয়েই আফগানিস্তানে প্রবেশ করে।
স্পিন বলদাক সীমান্ত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে তালেবান। কারণ প্রতিদিন এই সীমান্ত দিয়ে চলাচল করা হাজার হাজার যানবাহন থেকে বড় অঙ্কের কর পাবে সংগঠনটি।
২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে হামলা চালানো জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে তালেবানের সম্পর্কের জেরে আফগানিস্তানে সে সময় সামরিক অভিযান চালায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো।
মিত্র বাহিনীর সম্মিলিত অভিযানে ওই বছরই আফগানিস্তানের ক্ষমতা থেকে তালেবানকে উৎখাত করা হয়।
তালেবান উৎখাত হলেও আফগানিস্তানে দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর অবস্থান করে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র ন্যাটোভুক্ত দেশের সেনারা।
চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বরের আগেই আফগানিস্তান থেকে সব সেনা সরাতে নিজেদের সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এপ্রিলে বাইডেনের ওই ঘোষণার পর ন্যাটোর অন্য সদস্যরাষ্ট্রগুলোও আফগানিস্তান থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহারের কথা বলে এবং ধীরে ধীরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি থেকে বিদেশি সেনা সরতে শুরু করে।
এরই ধারাবাহিকতায় ১ জুলাই বিদেশি সেনাদের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি বাগরাম বিমানঘাঁটি ছেড়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র বাহিনী।
আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার-প্রক্রিয়ার মধ্যেই দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা চালানো শুরু করে তালেবান। আফগান সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই সংঘর্ষ বাধছে সংগঠনটির।
তালেবান কর্মকর্তাদের, আফগানিস্তানের ৮৫ শতাংশ অঞ্চল দখলে নিয়েছে সংগঠনটি।
অবশ্য আফগান সরকার তালেবানের এ দাবিকে ‘প্রোপাগান্ডা’ বলে নাকচ করেছে।