ব্রিটিশ আমলের রাষ্ট্রদ্রোহ আইনকে (ধারা ১২৪-এ) ‘ঔপনিবেশিক’ চিহ্নিত করে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে ‘স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও’ ওই আইনের প্রয়োজনীয়তা আছে কি?
প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনার পর্যবেক্ষণ, আইনটি প্রতিষ্ঠানগুলির কার্যক্রমের জন্য মারাত্মক হুমকি এবং যথেচ্ছ অপব্যবহারের জন্য ‘বিপুল শক্তি’ ধারণ করে।
বৃহস্পতিবার আদালত বলেছে, রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের বৈধতা যাচাই করা হবে এবং সরকারকে নির্দেশ দিচ্ছি সাবেক সেনা কর্মকর্তার আবেদনের জবাব দিতে। যে আবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রদ্রোহ আইনটি বাকস্বাধীনতার ওপর ‘শীতল প্রভাব’ সৃষ্টি করে এবং ‘মুক্ত মত প্রকাশ’ যা একটি মৌলিক অধিকার হিসাবে সংবিধান স্বীকৃত, সেক্ষেত্রে অযৌক্তিকভাবে নিষেধাজ্ঞা তৈরি করে।
আবেদনে দাবি জানানো হয়েছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ১২৪-এ সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক এবং তাকে ‘দ্ব্যর্থহীন ও নির্বিঘ্নে ভারতীয় দণ্ডবিধি থেকে বিলুপ্ত করা উচিত।’ ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর জেনারেল এসজি ভোম্বাতকের-এর আদালতে করা ওই আবেদনের শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি বলেন , ‘সমস্যা হল এটি ঔপনিবেশিক আইন, এই আইন প্রয়োগ করে ব্রিটিশরা স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে মহাত্মা গান্ধী , বালগঙ্গাধর তিলকর বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছিল।’
প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনা বিচারপতি এ এস বোপান্না এবং বিচারপতি হৃষিকেশ রায়কে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ বলেছে, বেশ কয়েকটি আবেদনে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে এবং সব আবেদনের ওপর এক সঙ্গে শুনানি হবে।
সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ‘আমাদের উদ্বেগ আইনটির অপব্যবহার এবং প্রশাসনিক কর্তাদের কোনও জবাবদিহিতা না থাকা নিয়ে।’ আদালত এই আইনকে প্রতিষ্ঠানগুলির কার্যক্রমের জন্য ‘গুরুতর হুমকি’ বলে অভিহিত করেছে।
প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেছেন, ‘এই আইন অপব্যবহারের প্রচুর নজির রয়েছে। এটা সেই ছুতোরের মতো, যার প্রয়োজন একটি কাঠ, কিন্তু সে পুরো বন কেটে ফেলতে চায়। আলোচ্য আইনটিও সেরকমই এক ছুতোরের সঙ্গে তুলনীয়।’
সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণের পাল্টা অ্যাটর্নি জেনারেল ভেনুগোপাল জানান, ‘এই আইন বাদ দেয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। এর সঙ্গে কিছু নির্দেশিকা যোগ করা হবে।’ সুপ্রিম কোর্টের অন্য একটি বেঞ্চেও দেশদ্রোহ আইন বাদ দেয়ার মামলার শুনানি চলছে। সেখানে কেন্দ্রের প্রতিক্রিয়া চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কয়েকদিন আগেই ইউএপিএ আইনে অভিযুক্ত ফাদার স্ট্যান স্বামী জামিন না পেয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।