বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পাকিস্তানেও সক্রিয় হচ্ছে তালেবান

  •    
  • ১৪ জুলাই, ২০২১ ১৯:৫৫

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, তালেবানের সাদা পতাকা উড়ছে এবং শত শত লোক জানাজায় অংশ নিচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, আফগানিস্তানে নিহত তালেবানদের পাকিস্তানের কোয়েটা এবং আশেপাশের কুচলাক, ডুকি ও পিশিন এলাকায় কবর দেয়ার জন্য আনা হয়।

আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান বাহিনী প্রত্যাহারের পর দেশটির বেশির ভাগ এলাকা দখল করে নিয়েছে তালেবান বাহিনী। তালেবানের পক্ষ থেকে গত সপ্তাহে দাবি করা হয়, দেশটির ৮৫ ভাগের নিয়ন্ত্রণই এখন তাদের কাছে। শুধু আফগানিস্তানে নয়, তালেবানের প্রভাব বাড়ছে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলেও। পাকিস্তান সীমান্তে তালেবানের কর্মকাণ্ড নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছেন ভয়েস অফ আমেরিকার সাংবাদিক রোশান নুরজাই। নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য এটি অনুবাদ করেছেন রুবাইদ ইফতেখার।

আফগান তালেবান ও তাদের সহযোগীরা পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সক্রিয় হয়ে উঠছে। স্থানীয় সূত্র থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষও স্বীকার করেছে, আফগানিস্তানের যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত তালেবান যোদ্ধার দাফন হচ্ছে পাকিস্তানে। আহত অনেক তালেবানকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে স্থানীয় হাসপাতালে।

পাকিস্তানের টেলিভিশন জিও নিউজকে ২৭ জুন এক সাক্ষাৎকারে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ স্বীকার করেন, আফগান তালেবান সদস্যদের অনেকের পরিবারই পাকিস্তানে বাস করে।

তিনি যোগ করেন, ‘কখনও কখনও তাদের মরদেহ আসে। কখনও কখনও তারা চিকিত্সা নিতে এখানকার হাসপাতালে আসে।’

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা পাকিস্তান সীমানার ভেতরে তালেবানের কর্মকাণ্ড সম্বন্ধে নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, বেলুচিস্তানের পশুতুন এলাকাগুলোতে তালেবান যোদ্ধারা নির্ভয়েই চলাফেরা করেন।

বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের কুচলাক এলাকার বাসিন্দারা জানান, প্রদেশটির মাদ্রাসাগুলো কেবল তালেবান ঘাঁটিই নয়, তারা মসজিদ থেকে অনুদানও সংগ্রহ করে।

ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি জানান, কুচলাকের বাসিন্দাদের অনেকেই তালেবানে যোগ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘সব গোত্র থেকেই স্থানীয়রা তাদের (তালেবান) সঙ্গে আছে। তারা বলে, তারা আফগানিস্তানে ইসলামিক আমিরাত প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ করছে।’

কুচলাকের বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা তালেবানের সঙ্গে জড়িত। ২০১৯ সালের আগস্টে শহরের একটি মাদ্রাসার মসজিদে বোমা বিস্ফোরণে নিহত চারজনের মধ্যে একজন ছিলেন তালেবান নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার ছোট ভাই।

আফগান সরকার ও আমেরিকা পাকিস্তানে তালেবানদের অভয়ারণ্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নেয়ার জন্যে বহু বছর ধরেই ইসলামাবাদকে দায়ী করে আসছে।

পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ বরাবরই দেশটিতে তালেবানের অভয়ারণ্যের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে গত মাসে আফগান টেলিভিশন টোলো নিউজকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ কুরেশি তার দেশে আফগানদের উপস্থিতির জন্য দুর্বল সীমান্ত নিরাপত্তা ও পাকিস্তানে বসবাসরত কয়েক লাখ আফগানকে দায়ী করেন।

তিনি বলেন, ‘একবার তাদের ফিরে যাওয়ার পর আন্তসীমান্ত যাতায়াত শুরু হয়। এর জন্য আমাদের দায়টা আরও বেশি।’

পাকিস্তানের সংবাদপত্র ডন রোববার এক প্রতিবেদনে জানায়, পেশোয়ার শহরের পুলিশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা বেশ কিছু ভিডিওর তদন্ত করছে। সেগুলোতে দেখা যায়, একদল মোটরসাইকেল আরোহী জানাজার সময় তালেবান পতাকা ধরে আছেন ও তাদের পক্ষে স্লোগান দিচ্ছেন।

তালেবানদের জানাজা

কোয়েটার ৮৫ কিলোমিটার পশ্চিমের গ্রাম পাঞ্জপাইয়ের এক বাসিন্দা জানান, তার এলাকায় নিয়মিত আফগানিস্তানে যুদ্ধে নিহতদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ও তাদের জন্য দোয়া করা হয়।

তিনি বলেন, ‘জানাজা হয়। তালেবান বক্তব্যও রাখে সেখানে। আর নিহত ব্যক্তিকে শহীদ আখ্যায়িত করে তার পরিবারকে অভিনন্দন জানায়।’

তিনি আরও জানান, আফগানিস্তানে তালেবানের পক্ষে লড়াইয়ে নিহত এক আদিবাসী নেতার ছেলের জন্য জানাজা ও দোয়ার আয়োজন করা হয়।

ওই ব্যক্তি বলেন, ‘তিনি ও তার বাবা দুজনই তালেবানের পক্ষে ছিলেন। ঈদের সময় তার বাবা ফিরে এলেও ছেলে আফগানিস্তানে থেকে যান ও নিহত হন। স্থানীয়দের দাবি ছিল, তিনি একটি ড্রোন হামলায় নিহত হন।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, তালেবানের সাদা পতাকা উড়ছে এবং শত শত লোক জানাজায় অংশ নিচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, নিহত তালেবানদের কোয়েটা এবং আশেপাশের কুচলাক, ডুকি ও পিশিন এলাকায় কবর দেয়ার জন্য আনা হয়।

তিনি বলেন, ‘মসজিদে তাদের জন্য বিশেষ নামাজ আদায় করা হয়। এ বিষয়টি এলাকার সবাই জানে।’

নিয়ন্ত্রণ হ্রাস

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইয়েদ নাজির বলেন, পাকিস্তানে তালেবানদের উপস্থিতি ‘পাকিস্তান স্বীকার করেছে’।

নাজির বলেন, ‘পাকিস্তানে তাদের ঘরবাড়ি, পরিবার ও সন্তান রয়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করার উপায়ও তাদের আছে। তবে তাদের ওপর পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।’

গত মাসে দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, জঙ্গি গোষ্ঠীটিকে যুক্তরাষ্ট্র ও আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে আনার জন্য পাকিস্তান তালেবানদের ওপর তার নিয়ন্ত্রণকে ব্যবহার করেছে।

ইমরান বলেন, ‘আমরা তাদের জোর করেছি, যাতে তারা আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসে।’

তিনি এও বলেন, আফগানিস্তান থেকে ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সব সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়ায় তালেবানদের ওপর থেকে পাকিস্তানের ‘নিয়ন্ত্রণ হ্রাস পেয়েছে’।

আফগানিস্তান থেকে এরই মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ আমেরিকান সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছে। দেশটিতে সহিংসতা বেড়েছে ও আফগান বাহিনীর কাছ থেকে থেকে প্রায় ১০০ জেলা দখল করেছে তালেবান।

আফগান সরকারের অভিযোগ, তালেবানকে সমর্থন দিচ্ছে পাকিস্তান ও বিদেশি জঙ্গিরা।

সোমবার এক টুইট বার্তায় আফগান ভাইস-প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ বলেন, আফগানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত তালেবান বাহিনীর একাংশকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তিনি লেখেন, ‘তাদেরকে পাকিস্তানের পেশোয়ার, কোয়েটা ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে পরিচালনা করা হয়।’

পাকিস্তান অবশ্য আফগান বিরোধে কোনোভাবে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে।

আল কায়েদার হুমকি

গত মাসে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগান তালেবানরা আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি। প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয় আল-কায়েদা আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকায় সক্রিয় এবং আফগানিস্তানে তারা তালেবানদের অধীনে কাজ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, “দলটি বিদ্রোহের ধরন এতটাই ‘অর্গানিক’ যে, তাদেরকে তালিবান সহযোগীদের থেকে আলাদা করা কঠিন বা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।”

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভারতীয় উপমহাদেশে আল-কায়েদার বেশিরভাগ সদস্য হলেন আফগান ও পাকিস্তানি।

আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান সাউফান সেন্টারের সিনিয়র ফেলো কলিন ক্লার্কের মতে, জটিল এই পরিস্থিতি ক্রমেই যদি ‘শুধু আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের’ বিষয় হয়ে পড়ে, তাহলে আল-কায়েদাকে ‘পরাজিত করা দুষ্কর’ হয়ে পড়বে।

ক্লার্ক বলেন, ‘আল-কায়েদার মতো স্থায়ী ও দীর্ঘায়ু গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায়।’

তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তান যদি গৃহযুদ্ধে ফিরে যায়, তবে তালেবানের দরকার পড়বে আল-কায়দাকে। তাদেরকে আফগানিস্তান সরকার ও ইসলামিক স্টেটের মতো সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এক জোট হতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর