খাদ্যের অভাব, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতিবাদে আন্দোলন তীব্র হয়েছে ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশ কিউবায়। সহিংস আন্দোলনে প্রাণ গেছে কমপক্ষে একজনের।
কিউবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানিয়েছে, রাজধানী হাভানার একটি এলাকায় নিহত ৩৬ বছর বয়সী দিউবিস লরেঞ্জো তেজেদা পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের সহিংসতার মাঝে পড়ে প্রাণ হারান।
বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, নাশকতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অজ্ঞাতসংখ্যক আন্দোলনকারীকে। আহত হয়েছে পুলিশ কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন।
ঘরবাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া, পুলিশ ও বেসামরিক জনতার ওপর ধারালো অস্ত্র, পাথর ও লাঠি নিয়ে হামলাসহ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনেছে প্রশাসন।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, অধিকারকর্মী, বিক্ষোভকারী, সংবাদকর্মীসহ বিপুলসংখ্যক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রোববারের নজিরবিহীন গণ-আন্দোলনের পর বিরোধী মত দমনে কিউবার ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টিনিয়ন্ত্রিত নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক ধরপাকড় চালায় বলে অভিযোগ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আমেরিকা অঞ্চলের পরিচালক এরিকা গুয়েভারা-রোজাস জানান, কয়েক দশকের সবচেয়ে বড় সরকারবিরোধী আন্দোলনের পর থেকে কমপক্ষে ১৪০ জন কিউবান নাগরিক আটক বা গুম হয়েছে।
হাভানাসহ অন্তত দেশের কমপক্ষে ৪৮টি এলাকায় শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ হামলা করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এসবের লক্ষ্য একটাই আর তা হলো সরকারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর সাহস দেখালেই শাস্তি মিলবে, এই বার্তা দেয়া। অর্থাৎ আর কোনো বিক্ষোভ সহ্য করবে না প্রশাসন।’
স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল অ্যালবারেস মঙ্গলবার আটক কিউবান সাংবাদিক ক্যামিলা অ্যাকোস্টার তাৎক্ষণিক মুক্তি দাবি করেন। তিনি স্পেনের শীর্ষস্থানীয় একটি দৈনিকের প্রতিবেদক। রাজধানীতে নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়।
সাংবাদিকদের অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স চলতি মাসে ‘সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্বকারী’ রাষ্ট্রপ্রধানদের তালিকা প্রকাশ করে। এতে লাতিন আমেরিকায় সংবাদমাধ্যমের প্রতি সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে নাম উল্লেখ ছিল কিউবার বর্তমান প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল ডায়াজ-শ্যানেলেরও। অন্যদের মধ্যে আছেন নিকারাগুয়ার স্বৈরশাসক ড্যানিয়েল ওর্টেগা, ব্রাজিলের কট্টর ডানপন্থি জায়ের বলসোনারোসহ অনেকে।
প্রেসিডেন্ট ডায়াজ-শ্যানেল সোমবার বিক্ষোভকারীদের ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রের বাস্তবায়নকারী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তার দাবি, ১৯৫৯ সালের বিপ্লবের পর প্রয়াত রাষ্ট্রনায়ক ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে গঠিত সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ভাঙন ধরাতে চায় ষড়যন্ত্রকারীরা।
পুঁজিবাদী যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় আগে থেকেই জর্জরিত কিউবার সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে নতুন করে ধাক্কা লাগে গত বছর করোনাভাইরাস মহামারির কারণে। পর্যটননির্ভর দ্বীপদেশটিতে মহামারি ও লকডাউনের প্রভাবে সৃষ্ট অর্থনৈতিক দুর্দশা এখনও অব্যাহত, যার জেরে সাম্প্রতিক আন্দোলন।
হাভানাভিত্তিক অধিকারকর্মী ক্যারোলাইনা ব্যারেরো জানান, রোববারের গণ-আন্দোলনের ভবিষ্যৎ পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে এবং বিক্ষোভকারীদের ‘অস্তিত্ব মুছে দিতে’ চলছে গণ-আটক অভিযান।
জুন থেকে গৃহবন্দি ব্যারেরো বাড়ি থেকে দেয়া বার্তায় বলেন, ‘এরা একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাসী। এদের কাজই এ রকম।’
অ্যামনেস্টির গুয়েভারা-রোজাস জানান, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার কারণে বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়নের প্রকৃত চিত্র বোঝা যাচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সোমবার কিউবার সরকারকে নাগরিকদের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানান।
জবাবে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে কিউবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রড্রিগেজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদরা নজিরবিহীন বিদ্বেষ আর দ্বিমুখী আচরণের দোষে দুষ্ট।
তিনি আগে যুক্তরাষ্ট্রে আফ্রিকান-আমেরিকানদের ওপর পুলিশের বর্ণবাদী আচরণ ও সংবাদকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধের আহ্বান জানান বাইডেনকে।