বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

২০২৪ নির্বাচন: প্রশান্ত কিশোরের দ্বারস্থ গান্ধী পরিবার

  •    
  • ১৪ জুলাই, ২০২১ ১২:৩৪

ভারতের বেশ কয়েকটি নির্বাচনে, বিশেষ করে অঞ্চলভিত্তিক রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টে দিতে সক্ষম বলে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় প্রশান্ত কিশোর। অপ্রতিদ্বন্দ্বী এ কৌশলবিদের সঙ্গে গান্ধী পরিবারের একজোট হওয়া এবারই প্রথম নয়। ২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রসের জেতাতে কাজ করেছিলেন কিশোর। কিন্তু রাজ্যটিতে পরাজয়ে দলটির সঙ্গে সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হয় তার। সেবার সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেস জোটকে পেছনে ফেলে রাজ্য জয় করে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি, যে শাসন চলছে এখনও। ওই ঘটনার চার বছর পর আবারও দলটির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে যাচ্ছেন তিনি।

ভারতে আগামী সাধারণ নির্বাচনের তিন বছর বাকি থাকতেই তৎপরতা শুরু করেছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয় পেতে দেশটির আলোচিত নির্বাচনবিষয়ক কৌশলবিদ (পলিটিক্যাল স্ট্র্যাটেজিস্ট) প্রশান্ত কিশোরের দ্বারস্থ হয়েছে গান্ধী পরিবার।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, কংগ্রেস নেতা সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী মঙ্গলবার প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নির্বাচন মাথায় রেখে তারা বড় কোনো পরিকল্পনা নিয়ে এগোনোর লক্ষ্যে কাজ করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, রাহুল গান্ধীর দিল্লির বাসভবনে গত সন্ধ্যার বৈঠকে তার সঙ্গে ছিলেন বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তাদের সঙ্গেই কথা বলেন প্রশান্ত কিশোর।

তবে কংগ্রেস সূত্রের মাধ্যমে পরে জানা গেছে, ভার্চুয়াল লিংকের মাধ্যমে আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীও।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে বৈঠকে গান্ধী পরিবারের তিন নেতার উপস্থিতি তাৎপর্যপূর্ণ। এর অর্থ হলো, যে লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে, তাতে জয় পেতে একজোট হয়ে এবং যে কোনো কৌশল গ্রহণে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।

সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, পাঞ্জাব বা উত্তর প্রদেশের নির্বাচন নিয়ে এ বৈঠক হতে পারে বলে শুরুতে ধারণা করা হচ্ছিল।

আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন সামনে রেখে পাঞ্জাবে টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে কংগ্রেস। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেতা অমরিন্দর সিংয়ের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস নেতা নভজোত সিং সিধু।

সিধুকে জেতাতে কংগ্রেস প্রশান্ত কিশোরের সাহায্য চাইবে বলে জল্পনা চলছিল।

তবে পরে জানা গেছে, পরিকল্পনা আরও বড় কিছুর। ২০২৪ সালে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ লোকসভার নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার লড়াইয়ে জয় পেতে কংগ্রেসকে সহযোগিতা করতে পারেন কিশোর।

ভারতের বেশ কয়েকটি নির্বাচনে, বিশেষ করে অঞ্চলভিত্তিক রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টে দিতে সক্ষম বলে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় প্রশান্ত কিশোর।

ভারতের আলোচিত নির্বাচনবিষয়ক কৌশলবিদ (পলিটিক্যাল স্ট্র্যাটেজিস্ট) প্রশান্ত কিশোর। ছবি: সংগৃহীত

অপ্রতিদ্বন্দ্বী এ কৌশলবিদের সঙ্গে গান্ধী পরিবারের একজোট হওয়া এবারই প্রথম নয়।

২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রসের জেতাতে কাজ করেছিলেন কিশোর। কিন্তু রাজ্যটিতে পরাজয়ে দলটির সঙ্গে সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হয় তার। সেবার সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেস জোটকে পেছনে ফেলে রাজ্য জয় করে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি, যে শাসন চলছে এখনও।

ওই ঘটনার চার বছর পর আবারও দলটির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে যাচ্ছেন তিনি।

রাজনীতিক সমীকরণ বদলে দিতে কিশোরের দক্ষতার ইতিহাসে কলঙ্কের ছাপ ফেলে ২০১৭ সালের উত্তর প্রদেশ নির্বাচন।

সে সময় কংগ্রেসের কাজের ধরন আর ভারসাম্যহীনতা নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছিলেন কিশোর; যা পরের প্রায় সবগুলো নির্বাচনে দলটির ভরাডুবির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এদিকে, গান্ধী পরিবারের সঙ্গে বৈঠকের আগে এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ারের সঙ্গে দুটি বৈঠক করেছেন কিশোর।

এতে গুঞ্জন রটেছে যে ক্ষমতাসীন বিজেপিকে ২০২৪ সালের নির্বাচনে হারাতে একজোট হতে পারে বাকি দলগুলো।

শারদ পাওয়ারের বাড়িতে সাবেক বিজেপি নেতা যশবন্ত সিনহার নেতৃত্বে ওই বৈঠকে অংশ নেয়নি কংগ্রেস। কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিজেপিবিরোধী কোনো জোট হতে পারে না বলে সে সময় স্পষ্ট জানিয়েছিলেন কিশোর ও পাওয়ার।

তবে এখন পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে কিশোর নিজে কোনো স্বীকারোক্তি দেননি। এনডিটিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, নির্বাচনে জয় পেতে এ ধরনের কৌশল ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

কে এই প্রশান্ত কিশোর

ভারতের আলোচিত নির্বাচন কৌশল প্রণয়নকারী প্রশান্ত কিশোরের জন্ম ১৯৭৭ সালে।

পশ্চিমবঙ্গের আগে ভারতের আরও কয়েকটি রাজ্যে কিশোরকে নিয়োগ দিয়ে সাফল্য পেয়েছে অন্য কয়েকটি দল। এমনকি নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে তার ইমেজ বাড়ানোর কাজও করেন এই কৌশলবিদ।

ভারতের রাজনীতির এই চিকিৎসক অবশ্য কখনোই রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত ছিলেন না। অর্থের বিনিময়ে রাজনীতির দাওয়াই দেয়ার পেশায় নামার আগে তিনি ছিলেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

আফ্রিকায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হিসেবে আট বছর চাকরির পর ২০১১ সালে দেশে ফেরেন; গড়েন সিটিজেনস ফর অ্যাকাউন্টেবল গভর্নমেন্ট (সিএজি) নামে একটি সংস্থা।

২০১২ সালে গুজরাট বিধানসভার নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির হয়ে ভোটের রণকৌশল প্রণয়ন করেন কিশোর। গুজরাট দাঙ্গায় বিতর্কিত মোদির ভিন্নধর্মী ভাবমূর্তি তরুণদের সামনে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। মোদিকে জেতাতে উন্নয়নের সঙ্গে ঐক্যের বার্তা জুড়ে তৈরি করেন প্রচারণা কৌশল।

মূলধারার গণমাধ্যমকে এড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিশোর এমনভাবে প্রচারণা চালান, যার ফলে গুজরাট দাঙ্গার কালিমা মুছে ফের গুজরাটের ক্ষমতায় আসতে সক্ষম হন মোদি।

গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রশান্ত কিশোর। ছবি:সংগৃহীত

সেই সাফল্যের পর প্রশান্তকে জাতীয় পর্যায়ের দায়িত্ব দেন মোদি। ভারতের ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রচার-প্রচারণার কৌশল তৈরি করেন কিশোর।

ওই সময়ই কিশোরের মাথা থেকে বের হয় ‘চায়ে পে চর্চা’, ‘রান ফর ইউনিটির’ মতো ধারণাগুলো। এতে ভর করে দেশজুড়ে বিপুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠা মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থেকে হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

এরপর ২০১৫ সালে বিহারের বিধানসভার ভোটে সংযুক্ত জনতা দলের নেতা নীতিশ কুমারকে জেতাতে ভূমিকা রাখেন কিশোর। ওই সময় অঞ্চল ভাগ করে সেখানকার সমস্যা বুঝে তিনি নীতিশের বক্তব্য তৈরি করতেন। নীতিশের উপদেষ্টা হিসেবেও বেশ কিছু জনমুখী পরিকল্পনা হয় তার হাত ধরে।

২০১৬ সালের পাঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংয়ের জয় নিশ্চিতেরও কারিগর ছিলেন প্রশান্ত কিশোর।

তবে পরের বছর উত্তর প্রদেশ বিধানসভার ভোটে ধাক্কা খান কিশোর। সেবার কংগ্রেসের রাজনৈতিক কৌশল তৈরি করলেও সেটি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। ওই নির্বাচনে মাত্র সাতটি আসন পায় কংগ্রেস। প্রতিপক্ষ বিজেপি তিন শতাধিক আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসে।

কিশোরের ঝুলিতে ব্যর্থতা বলতে গেলে এই একটিই।

২০১৯ সালে তার কৌশল অনুসরণ করে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন জগনমোহন রেড্ডি।

গুজরাট, বিহার, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশের পর চলতি বছর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে প্রশান্ত কিশোর কাজ করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভারতীয় কৌশলবিদ প্রশান্ত কিশোর। ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনে তৃণমূলের জয় নিশ্চিতের পর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘মোদির জনপ্রিয়তা মানে এই নয় যে বিজেপি সব নির্বাচনেই জিতবে।’

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা জানিয়ে কিশোর বলেছিলেন, ‘আমরা কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছি। নির্বাচন কমিশন চরমভাবে পক্ষপাতদুষ্ট ছিল। এতে আমাদের প্রচার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল। তবে আমরা যা করছি সে বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। প্রত্যাশার চেয়েও ভালো করেছে তৃণমূল।’

প্রশান্ত কিশোরের সাফল্যের রহস্য নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার তাদের প্রতিবেদনে লিখেছিল, তার প্রথম হাতিয়ার রিসার্চ বা গবেষণা। প্রতিটি বুথ ধরে সমীক্ষা করে সেখানকার সমস্যা জানেন তিনি এবং সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা নেন।

দ্বিতীয়ত, পেশাদারদের দিয়ে অভিনব প্রচার ও রাজনৈতিক কর্মসূচি তৈরি করেন কিশোর। সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথ বাতলে দেন। এর সঙ্গে পক্ষের এবং বিপক্ষের শক্তি-দুর্বলতা বুঝে কৌশল সাজান।

আনন্দবাজার লিখেছে, বিভিন্ন রকম সমীকরণ নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে তার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা এবং ঘাটতি দূর করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়ার পরিকল্পনা প্রশান্ত কিশোরের সাফল্যের চাবিকাঠি।

এর ব্যতিক্রম ছিল না পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনেও। কিশোরের পরামর্শে নাগরিকদের সুবিধা-অসুবিধা জানতে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি শুরু করে তৃণমূল।

‘দিদিকে বলো’র সাফল্যের পর দলের জনসংযোগ বাড়াতে চালু করা হয় ‘বাংলার গর্ব মমতা’ নামের প্রচার। ১১ ধাপে তিনটি পর্যায়ে ৭৫ দিন ধরে চলা চলা এ কর্মসূচিতে সাত প্রায় হাজার গ্রামে প্রচারণা চালান তৃণমূলের এক লাখ নেতা-কর্মী। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝান রাজ্যের উন্নয়নে মমতার অপরিহার্যতার বিষয়টি।

তৃণমূলে মমতা ছাড়া আর বিকল্প কোনো মুখ নেই। তাই তার কারিশমার ওপর ভিত্তি করেই কর্মসূচি সাজান প্রশান্ত কিশোর। তার সে প্রচারণা অনুযায়ী বাংলা শেষ পর্যন্ত বেছে নিয়েছে মমতাকেই।

এ বিভাগের আরো খবর