বিজেপিকর্মীদের ফের বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন দলটির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
এমনকি তার সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়ে বিজেপির দুই গোষ্ঠী।
মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমান জেলার কার্যকারিণী বৈঠকে যোগ দিতে বিজেপির জেলা অফিসে পৌঁছলে বিজেপির একটি গোষ্ঠীর বিক্ষোভের মুখে পড়েন দিলীপ।
ওই দিনের বৈঠকে আমন্ত্রণ না পাওয়া নিয়ে কিছু কর্মী সকাল থেকে বিজেপির জেলা অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন।
দিলীপ জেলা অফিসে পৌঁছলে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়।
জানা গেছে, বিজেপির পুরুলিয়া জেলা যুব মোর্চা সহসভাপতি ইন্দ্রনীল গোস্বামী আমন্ত্রণ না পেয়ে দিলীপকে কিছু বলতে চেয়ে ভেতরে ঢুকতে চাইলে তাকে বাধা দেয়া হয়। তখনই গোলমাল বাধে।
এমনকি দিলীপ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে বিক্ষোভকারীরা সেখানে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।
বাধ্য হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিতে হয় দিলীপকে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতির সামনেই বিজেপির দুই গোষ্ঠী অশ্রাব্য গালিগালাজ ও ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়ে।
বিজেপির পুরোনো এক কর্মীর অভিযোগ, ‘দীর্ঘদিন ধরে দলের কাজ করেছেন তারা।
‘একসময় দিলীপের মতো রাজ্য নেতারা তাদের বাড়িতে গিয়ে মধ্যহ্নভোজ সেরে দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতেন।
‘আর এখন তারাই ব্রাত্য হয়ে গেছেন। যত স্বার্থান্বেষী, দুর্নীতিবাজরা এখন দলের বৈঠকে ডাক পায় । অথচ তাদের ডাকা হয় না।’
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে সরকার গঠনে বিজেপির স্বপ্ন ভেঙে যেতে সেই যে দলে গোষ্ঠী কোন্দল আর ভাঙনের রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে, তা আর থামছে না । দিকে দিকে বিজেপিতে বিদ্রোহের স্বর চড়ছে ।
সৌমিত্র খাঁ, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এমনকি সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়া বিজেপির সংসদ সদস্য বাবুল সুপ্রিয় ও দিলীপের ঝগড়া এখন প্রকাশ্য।
জানা গেছে, দলবিরোধী কাজের জন্য এদের বিরুদ্ধে দিলীপ দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন।
অন্যদিকে বাবুলের তৃণমূলে যোগ দেয়ার জল্পনাও তুঙ্গে উঠেছে।
অবশ্য তৃণমূলে যোগদানের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বাবুল।
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি তার তৃণমূল ঘনিষ্ঠতার পোস্ট রয়েছে।
অন্যদিকে দলবিরোধী কাজের অভিযোগে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলবিরোধী মন্তব্য করে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন পুরুলিয়ার তিন বিজেপি নেতা ।
এরা হলেন বিজেপির এসসি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক স্বপন বাউরি। কাশিপুর বিধানসভার শুভদীপ প্রামাণিক ও বলরামপুর বিধানসভার সভাপতি অশ্বিনী সিং সর্দার।
বিজেপির পুরুলিয়ার জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘দলবিরোধী কাজের জন্য রাজ্য কমিটির সিদ্ধান্তে এদের বহিষ্কার করা হয়েছে।’
বহিষ্কার হওয়ার পর স্বপন বাউরি বলেন, ‘দিলীপ ঘোষ অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র।’
বিধানসভা নির্বাচনের আগেও বর্ধমানে বিজেপির গোষ্ঠী সংঘর্ষে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল।
পুলিশ নামিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়।
কয়েকজন দলীয় নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল তখন।
রাজ্যে ভোটে হারার পর হুগলিতেও দিলীপ বিজেপিকর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন।
মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমান ছাড়ার আগে বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল নিয়ে দিলীপ কোনো মন্তব্য করেননি।
তবে সূত্রের খবর, দিলীপ দিল্লি গিয়ে নাকি বিজেপির শীর্ষ নেতাদের তৃণমূল থেকে আসা নতুন কাউকে দলের বড় কোনো দায়িত্ব না দিতে পরামর্শ দিয়েছেন।