আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক মিশনের প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন জেনারেল অস্টিন স্কট মাইলার। আনুষ্ঠানিকভাবে সোমবার দুইজন আমেরিকান জেনারেলকে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন তিনি।
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটোর ২০ বছরের যৌথ অভিযানের সময় ঘনীয়ে আসছে।
দেশটি থেকে আগামী ৩১ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ সেনা প্রত্যাহারের তারিখ বেঁধে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার ঘোষণার পরপরই এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পদত্যাগ করেন জেনারেল মাইলার।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাজ্যসহ ন্যাটোভুক্ত অন্যান্য সেনাবাহিনীও আফগানিস্তান থেকে প্রায় সব সেনাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে। সশস্ত্র আফগান রাজনৈতিক সংগঠন তালেবান দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে নিতে থাকার মধ্যেই তড়িঘড়ি সেনা প্রত্যাহার করছে দেশগুলো।
কাবুলে সুরক্ষিত গ্রিন জোনে সাদামাটা এক আয়োজনে মাইলার তার অন্যতম উত্তরসূরী হিসেবে মেরিন জেনারেল ফ্র্যাঙ্ক কেনেথ ম্যাককেঞ্জিকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন।
জেনারেল ফ্র্যাঙ্ক ম্যাককেঞ্জিকে (ডানে, স্যালুটরত) আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব হস্তান্তর করছেন জেনারেল স্কট মাইলার (বামে, পতাকা হাতে)। ছবি: এএফপি
আল-কায়েদার মতো নিষিদ্ধঘোষিত ও সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে বিমান হামলাসহ আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য সন্ত্রাসবিরোধী ও সামরিক কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেবেন ম্যাককেঞ্জি। ফ্লোরিডার সেন্ট্রাল কমান্ড থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক শীর্ষ কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।
এ ছাড়া আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা মিশনে নেতৃত্ব দেবেন নৌবাহিনীর রিয়ার অ্যাডমিরাল পিটার ভ্যাসেলি। আফগানিস্তানে কর্মরত আমেরিকান কূটনীতিকদের সুরক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ৬৫০ সেনা কাজ করবে তার অধীনে।
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর যৌথ মিশনে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় নেতৃত্ব দিয়েছেন জেনারেল স্কট মাইলার। তার বিদায়ী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শীর্ষ আফগান সেনা কর্মকর্তারাও।
আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালনকে নিজ কর্মজীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক আখ্যা দেন মাইলার।
মাইলারের প্রস্থান যুক্তরাষ্ট্রের আফগান মিশনের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ারসহ কয়েকটি স্থানে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র, ক্ষমতাচ্যুত করে তালেবানকে। নাইন ইলেভেনের হামলার হোতা নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন ও অন্যান্য নেতাদের আশ্রয় দিয়েছিল তালেবান।
বিদেশি ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম এই যুদ্ধ শুরুর দুই দশক পর আফগানিস্তান ছাড়ছে দেশটির সেনারা। এ সুযোগে দেশটিতে আবারও গৃহযুদ্ধের শঙ্কা ঘনীয়ে উঠছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
এরই মধ্যে ৮৫ শতাংশ এলাকা দখলে নিয়েছে বলে চলতি সপ্তাহে দাবি করেছে তালেবান। এ দাবি স্বাধীনভাবে যাচাইয়ের উপায় না থাকলেও বিভিন্ন হিসাবে দেখা যাচ্ছে, দেশটিরর ৪১৯ জেলার এক-তৃতীয়াংশের বেশি বর্তমানে তালেবানের নিয়ন্ত্রণে।
কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে তালেবানের বিরুদ্ধে লড়ছে আফগান সেনাবাহিনী। এ অবস্থায় গত কয়েক সপ্তাহে আফগানিস্তানে সহিংসতা তীব্র রূপ নিয়েছে।