কলকাতার হরিদেবপুর থেকে রোববার আটক তিন জেএমবি জঙ্গিকে জেরা করে আরও দুইজনের হদিস পেয়েছে পুলিশ। এই দুইজনের মধ্যে একজন শেখ শাকিল, অপরজন সেলিম মুন্সি।
এই সেলিম মুন্সি আটক জঙ্গিদের লিংকম্যান হিসেবে কাজ করত। হরিদেবপুরে দুটি ঘর ভাড়া নিয়েছিল জঙ্গিরা। সেই ঘর খুঁজে দিতে সাহায্য করেছিল হরিদেবপুরের বাসিন্দা মুন্সি।
এদিকে, শেখ শাকিল ওই তিনজনকে আধার কার্ড বানিয়ে দিয়েছিল। মুন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করে দিয়েছিল শাকিল। পলাতক এই দুই ব্যক্তির সন্ধানে তল্লাশি শুরু করেছে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ। আটক তিনজনই বাংলাদেশে মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকাভুক্ত।
গ্রেপ্তার তিন সন্দেহভাজন জেএমবি জঙ্গিকে জেরা করে আরও অনেক বিস্ফোরক তথ্য তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। হরিদেবপুরে যেখানে তারা ভাড়া থাকত, সেখানে হানা দিয়ে এসটিএফ বেশ কিছু লিফলেট পায়। যেখানে লেখা, ‘বাংলার মায়েদের রান্নাঘরে বোমা তৈরি হোক’। একই সঙ্গে ভারতের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণার কথাও লেখা ছিল বলে কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে।
সোমবার গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আদালতে তোলা হলে ২৬ জুলাই পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয়া হয়।
এসটিএফ জানায়, জেএমবি নেতা তাসলিমের নির্দেশেই রাজ্যে ঢুকেছিল তিন জঙ্গি। কোন উদ্দেশে তারা কলকাতার দক্ষিণ শহরতলিতে ঘাঁটি গেড়েছিল, এখনও স্পষ্ট নয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের নাম নাজিউর রহমান ওরফে জোসেফ, শেখ সাব্বির ও রবিউল ইসলাম। সূত্রের খবর, আটক এই দলটির নেতা জোসেফ জেএমবি বাংলাদেশের মাথা আল-আমিনের আত্মীয়। আগে বিজিবির চাকরি করলেও জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়ে পড়ার পর কাজ হারায়। জেলও খাটতে হয়। তারপরই সম্ভবত কলকাতায় ডেরা বানিয়েছিল বলে অনুমান পুলিশের। এই তিনজন ফেরিওয়ালার বেশে এলাকায় রেকি করত। তলে তলে করত সদস্য এবং তহবিল সংগ্রহ। তিনজনের বাড়ি বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ এলাকায়।
জানা গিয়েছে, তদন্তে বাংলাদেশ পুলিশের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। ধৃত ব্যক্তিদের ঘরে তল্লাশি চালিয়ে হাতে লেখা ডায়েরিসহ মোবাইল এবং জিহাদি নথি উদ্ধার করেছে এসটিএফ। মোবাইল ঘেঁটে কলকাতাসহ বাংলাদেশের কয়েকজনের নম্বর উদ্ধার হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের অ্যাকাউন্ট ছিল। তদন্তে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তবে শুধু সদস্য এবং তহবিল সংগ্রহ, না বড় সড় নাশকতার ছক কষছিল তারা তা খতিয়ে দেখছে কলকাতা পুলিশ।
সূত্রের খবর ধৃত তিনজনের মধ্যে নাজিউর জঙ্গি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সে বাকিদের নির্দেশ দিত। তার নির্দেশেই বাকি দুইজন জিনিস ফেরির আড়ালে এলাকায় টহল দিত।
অন্যদিকে, রোববারই গোপন সূত্রে খবর পেয়ে দুই সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে উত্তর প্রদেশ পুলিশ ও জঙ্গি দমন শাখা। তাদের নাম মিনহাজ আহমেদ ও মাসিরউদ্দিন। দুজনের বয়স ৫০-এর কাছাকাছি। তাদের ঘর থেকে প্রচুর বিস্ফোরক জব্দ করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল। আগামী বছর উত্তর প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে আগেই বড় সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। বাড়িতে নিজেরাই বানিয়ে নিচ্ছিলেন বোমা।