সাউথ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার আত্মসমর্পণের পর দেশটির বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা চালিয়েছে তার সমর্থকেরা। এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি।
সাউথ আফ্রিকার কোয়াজুলু-নাতাল প্রদেশের ইস্টকোর্ট কারাগারে রয়েছেন জ্যাকব জুমা।
মূলত ওই প্রদেশ এবং অর্থনৈতিক রাজধানী জোহানেসবার্গে করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ ভেঙে শত শত মানুষ লুটপাট করে, যানবাহনে আগুন জ্বালিয়ে তাণ্ডব চালায়। দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষও বাধে। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
সাউথ আফ্রিকার পুলিশ রোববার এক বিবৃতিতে জানায়, দেশের পূর্বাঞ্চলীয় কোয়াজুলু-নাতাল প্রদেশ থেকে ৩৭ এবং জোহানেসবার্গ থেকে ২৫ জনকে গত দুই দিনে গ্রেপ্তার করা হয়।
বৃহস্পতিবার জুমাকে কারাবন্দি করার পরদিন শুক্রবার কোয়াজুলু-নাতাল প্রদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
সাউথ আফ্রিকার ডারবান ও জোহানেসবার্গ শহর সংযোগকারী সড়ক বেশ কয়েক ঘণ্টা আটকে দেয় জুমার সমর্থকেরা।
ইস্টকোর্ট কারাগারের আশপাশের রাস্তাও ওই সময় অবরোধ করা হয়। মুই রিভার শহরে ২৩টি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা।
আদালত অবমাননার কারণে জুমাকে ১৫ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
প্রেসিডেন্টের আত্মসমর্পণের খবরে সমর্থকরা ক্ষোভে ফেটে পড়লেও সাউথ আফ্রিকায় চলমান অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা সহিংসতার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকে।
করোনাভাইরাসের তৃতীয় ধাক্কা মোকাবিলায় সম্প্রতি কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সাউথ আফ্রিকা।
বিধিনিষেধের কারণে উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছে দেশটির মানুষ।
এদিকে শনিবার জনগণকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান সাউথ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা।
দেশের আইনশৃঙ্খলা মানতে এবং অর্থনীতি আরও বিপর্যস্ত হতে পারে- এমন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে জনগণকে অনুরোধ জানান তিনি।
রোববার কোয়াজুলু-নাতাল প্রদেশের পুলিশের মুখপাত্র জে নাইকার বলেন, ‘অপরাধী ও সুযোগসন্ধানী মানুষ উত্তেজিত পরিবেশের সুযোগ নিচ্ছে। করোনার বিধিনিষেধ ভেঙে তারা রাস্তায় নেমে বেশ কয়েকটি শহরে লুটপাট চালায়।’
জোহানেসবার্গের উপকণ্ঠে জেপ এলাকায় প্রায় ৩০০ মানুষ লুটপাট শুরুর আগে মূল সড়কে ব্যারিকেড দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের ছত্রভঙ্গ করে।
এ ছাড়া আলেজান্দ্রা শহরে রোববার রাতভর প্রায় আট শ দাঙ্গাবাজের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে এক পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন।
২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টানা প্রায় ৯ বছর সাউথ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন জুমা। সে সময় তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন জুমা।
প্রেসিডেন্ট থাকাকালে জুমার বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে তাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সাউথ আফ্রিকার শীর্ষ আদালত।
কিন্তু সে সময় আদালতে হাজির হতে অসম্মতি জানান ৭৯ বছর বয়সী এই প্রেসিডেন্ট।
এ কারণে ২৯ জুন তাকে ১৫ মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার রাতে আত্মসমর্পণ করেন জুমা।