কানাডায় একের পর এক আদিবাসী শিশুদের গণকবরের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী চলছে সমালোচনার ঝড়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো গণকবরের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশও করেছেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে কানাডায় বসবাসরত আদিবাসীদের প্রতি সেখানকার ইমামরা সংহতি জানিয়েছেন।
শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে কানাডার অন্টারিও প্রদেশের লন্ডন মুসলিম মস্কের ইমাম আরিজ আনোয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, ‘এখানকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের যন্ত্রণা আমাদের সবার বোঝা উচিত।
‘আমাদের ফেলে আসা দেশে সাম্রাজ্যবাদ কী করেছে, তা আমরা নিজের চোখে দেখেছি।’
আদিবাসী মানুষের প্রতি সংহতি জানাতে অন্য মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানান আনোয়ার।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় নিজের দাদার দিল্লি থেকে পালানোর গল্পও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন তিনি।
আনোয়ার বলেন, ‘আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, আপনাদের সবার একই ধরনের গল্প রয়েছে।
‘সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও নৃশংস হত্যার যন্ত্রণা কেউ যদি অনুভব করতে পারে, তবে সেটা আমরা।
‘এ জন্য আদিবাসীদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি বেশি হওয়া উচিত। তাদের প্রতি আমাদের সমর্থন আরও বেশি হওয়া দরকার, কারণ আমরা এ যন্ত্রণার সঙ্গে পরিচিত।’
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, এক হাজারের বেশি আদিবাসী শিশুর কবরের খোঁজ পাওয়ার পর কানাডাজুড়ে শুক্রবার আনোয়ারসহ ৭৫ ইমাম দেশটির আদিবাসীদের প্রতি সমবেদনা ও সংহতি জানান।
কানাডায় মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কানাডিয়ান কাউন্সিল অফ ইমামস অ্যান্ড জাস্টিস ফর অল কানাডা।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদে নামে পরিবার থেকে চুরি করে এনে নিষ্পাপ আদিবাসী শিশুদের নির্যাতন-নিপীড়ন ও অনাহারে রাখা হতো।
‘এখন কয়েক দিন পরপর ওই সব শিশুর গণকবরের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। এ ঘটনা আমাদের বেদনা ও লজ্জায় বাকরুদ্ধ করে ফেলেছে।’
আশির দশকের শেষ সময় থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ আদিবাসী শিশুকে জোর করে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে কানাডা।
মূলধারার সংস্কৃতি আয়ত্তে আনতে ক্যাথলিক চার্চ পরিচালিত আবাসিক স্কুলে ওই শিশুদের ভর্তি করা হয়। সেখানে তাদের চুল কেটে দেয়া হতো।
স্কুলে নিজেদের ভাষায় কথা বলা নিষেধ ছিল ওই আদিবাসী শিশুদের। নিজেদের সংস্কৃতিচর্চারও অনুমতি ছিল না তাদের।