আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে রাতভর সংঘর্ষ শেষে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় কান্দাহার প্রদেশের এক গুরুত্বপূর্ণ জেলা দখলে নিয়েছে তালেবান।
কান্দাহারের পাঞ্জওয়াই জেলা রোববার তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় বলে দেশটির কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান।
পাঞ্জওয়াই জেলার গভর্নর হাসতি মোহাম্মদ বলেন, শনিবার রাতে তালেবান ও আফগান বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে পিছু হটে আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনী।
হাসতি মোহাম্মদ বলেন, ‘পাঞ্জওয়াই জেলা পুলিশের প্রধান দপ্তর ও গভর্নরের কার্যালয় ভবন এখন তালেবানদের দখলে।’
কান্দাহারের প্রাদেশিক পরিষদের প্রধান সাঈদ জান খাকরিওয়ালও পাঞ্জওয়াই পতনের কথা স্বীকার করেন।
তবে পাঞ্জওয়াই থেকে আফগান বাহিনী ‘ইচ্ছা করে নিজেদের প্রত্যাহার’ করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
পাঞ্জওয়াইর সীমান্ত পুলিশের কমান্ডার আসাদুল্লাহ বলেন, ‘রাতে তালেবানদের বিরুদ্ধে কেবল পুলিশ বাহিনীই লড়াই করে।
‘সেনাবাহিনী ও কমান্ডোদের কাছে উন্নত সামরিক অস্ত্রশস্ত্র থাকলেও তারা কোনো লড়াইই করেনি।’
এ নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পাঞ্জওয়াইসহ কান্দাহার প্রদেশের পাঁচটি জেলা দখলে নিল তালেবান।
এদিকে পাঞ্জওয়াই তালেবানের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পরপরই স্থানীয় বেশ কয়েকটি পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।
পাঞ্জওয়াইয়ের বাসিন্দা জিরান বলেন, ‘পরিবার নিয়ে পালানোর সময় তালেবান আমাদের গাড়িতে গুলি ছোড়ে। কমপক্ষে পাঁচটি গুলি গাড়িতে লাগে।
‘তালেবানরা পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থান নিয়েছে। যেকোনো চলন্ত গাড়ির দিকে তারা গুলি ছুড়ছে। তারা শান্তি চায় না।’
পাঞ্জওয়াই ছেড়ে পরিবারসহ কান্দাহার প্রদেশের রাজধানী শহর কান্দাহারে আশ্রয় নিয়েছে জিরান ও তার পরিবার।
চলতি বছরের এপ্রিলে আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সব সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখ টুইন টাওয়ারে হামলার ২০ বছর পূর্তির আগেই সেনা সরানোর বাইডেনের ওই ঘোষণার পর ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোও ওই সময়ের মধ্যে তাদের সেনা প্রত্যাহারের কথা জানায়।
যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার পর মের শুরু থেকেই আফগানিস্তানের বেশ কয়েকটি এলাকা দখলের উদ্দেশ্যে হামলা চালানো শুরু করে তালেবান।
শুক্রবার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের কাছে বিদেশি সেনাদের প্রধান বিমানঘাঁটি বাগরাম থেকে সব সেনা সরিয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনী।
আফগানিস্তানে তালেবান ও এর মিত্র আল-কায়েদার বিরুদ্ধে বিদেশি সেনাদের দুই দশকের লড়াইয়ে বাগরাম বিমানঘাঁটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিদেশি সেনারা বাগরাম ঘাঁটি ছাড়ার দুই দিন পরই পাঞ্জওয়াইয়ে হামলা চালিয়ে তা দখলে নেয় তালেবান।
বেশ কয়েক বছর ধরে পাঞ্জওয়াই দখলের লক্ষ্যে জেলাটির ভেতর ও বাইরে আফগান বাহিনীর সঙ্গে নিয়মিত সংঘর্ষ হয় তালেবান যোদ্ধাদের।
তালেবান নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার জন্ম এই পাঞ্জওয়াইয়ে।
কান্দাহার প্রদেশ তালেবানের জন্মভূমি হিসেবে পরিচিত।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক অভিযানের মাধ্যমে আফগানিস্তানের ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়ার আগ পর্যন্ত ইসলামি শরিয়াহ আইন অনুযায়ী দেশটি শাসন করে তালেবান।