ফ্রান্সের সঙ্গে ভারতের রাফায়েল যুদ্ধবিমান ক্রয় চুক্তি নিয়ে বিতর্ক কিছুতেই থামছে না।
ফরাসি ওয়েবসাইট মিডিয়াপার্ট শুক্রবার রাতে এক প্রতিবেদনে জানায়, ভারতকে ৩৬টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ইউরোতে বিক্রিসংক্রান্ত চুক্তির ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ তদন্তে নেতৃত্ব দিতে এক ফরাসি বিচারককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মিডিয়াপার্টের অনুসন্ধানী প্রতিবেদক ইয়ান ফিলিপিন জানান, ফরাসি পাবলিক প্রসিকিউশন সার্ভিসেস, পিএনএফের আর্থিক অপরাধ শাখার সিদ্ধান্তের পর ২০১৬ সালের ভারত-ফ্রান্স চুক্তি নিয়ে ‘অত্যন্ত সংবেদনশীল তদন্ত’ গত ১৪ জুন শুরু হয়।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মিডিয়াপার্ট একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
ওই প্রতিবেদনে রাফায়েল যুদ্ধবিমান ক্রয়-বিক্রয়ে তথ্যপ্রমাণসহ দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়।
ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে চুক্তি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে একজন মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকার কথাও বলা হয় ওই প্রতিবেদনে।
এতে বলা হয়, চুক্তির মধ্যস্থতাকারীকে ১০ লাখ ইউরো (প্রায় ৯ কোটি টাকা) ‘উপহার’ দিয়েছে রাফায়েল নির্মাণ সংস্থা দাসো অ্যাভিয়েশন।
এতে আরও বলা হয়, ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ওই মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা সম্পর্কে জানার পরও কোনো তদন্ত করেনি।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর ফরাসি দুর্নীতি দমনবিরোধী এনজিও শেরপা এ চুক্তির ক্ষেত্রে ‘দুর্নীতি’, ‘প্রভাব খাটানো’, ‘অর্থ পাচার’, ‘পক্ষপাতিত্ব’ ও ‘অযৌক্তিক’ ট্যাক্স মওকুফের কথা উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল অফ প্যারিসে (পিএনএফ) অভিযোগ করে।
সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল একজন বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
২০১৮ সালে রাফায়েল চুক্তি নিয়ে তদন্তের দাবি নাকচ করেছিল পিএনএফ। সে সময় ‘তথ্যপ্রমাণ অভাবের’ অজুহাত দেখিয়ে দাবি নাকচ করা হয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে ২০১৬ সালে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে ৩৬টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করে ভারত।
সে সময় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ফ্রাঁসোয়া ওঁলা।
ফরাসি একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবি করা হয়, চুক্তির কিছুদিন পর ফরাসি দুর্নীতি দমন সংস্থার তদন্তে মধ্যস্থতাকারীকে দেয়া ‘উপহার’সংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণ মিলেছিল।
তদন্তকারীদের সে সময় দাসো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, উপহার হিসেবে রাফায়েল যুদ্ধবিমানের ৫০টি রেপ্লিকা তৈরিতে পাঁচ লাখ ইউরো ব্যয় হয়।
তবে রেপ্লিকা তৈরি ও বিতরণের কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি যুদ্ধবিমান নির্মাণ সংস্থাটি।
বরং তদন্তে জানা যায়, প্রায় ১০ লাখ ইউরো হিসাববহির্ভূত খরচ হয়েছে চুক্তি পর্বে।