করোনাভাইরাস মহামারির সময় সংঘাত ও শত্রুতা ভুলে ফের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতবাসীর জন্য প্রার্থনা ও সমবেদনা জানিয়েছেন লাখো পাকিস্তানি।
যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগি ম্যালন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আশিকুর খোদাবক্সের নেতৃত্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে চালানো জরিপে উঠে এসেছে এমন বার্তা।
বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর ২১ এপ্রিল থেকে ৪ মে পর্যন্ত এমন গবেষণা চালানো হয়। ‘ইন্ডিয়া নিডস অক্সিজেন’, ‘পাকিস্তান স্ট্যান্ডস উইথ ইন্ডিয়া’ ও ‘ইন্ডিয়া সে সরি টু কাশ্মীর’- এই তিন হ্যাশট্যাগের ওপর নজর রাখেন গবেষকরা।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই তিন হ্যাশট্যাগ পোস্টের বিপরীতে ৩ লাখ টুইট নিয়ে পর্যালোচনা করেন তারা।
খোদাবক্স বলেন, ‘এই তিন হ্যাশট্যাগের বিপরীতে সহমর্মিতা ও সহযোগিতামূলক টুইট ছিল ৮৩ শতাংশের বেশি। তবে কাশ্মীর ইস্যুতে তৃতীয় হ্যাশট্যাগটির বিপরীতে পাকিস্তান থেকে টুইট করেছেন ৫৫ হাজার ৭১২ জন। আর ভারত থেকে মন্তব্য করেছেন ৪৬ হাজার ৬৫১ জন। অনেকে বিভিন্ন দেশ থেকেও টুইট করেছেন।’
তিনি জানান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তারা খুব সহজে ইতিবাচক টুইটগুলোকে আলাদা করতে পেরেছেন। তবে কিছু কিছু নেতিবাচক টুইটও ছিল সেখানে। পাশাপাশি বলিউডের তারকা ও ভারতীয় ক্রিকেটারদের জন্মদিন উল্লেখ করে শুভেচ্ছা বার্তাও দিয়েছেন অনেকে।
গবেষণার ওই সময়কালে মহামারিতে বিপর্যস্ত ভারতের হাসপাতালগুলোতে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়ার মতো কোনো শয্যা ফাঁকা ছিল না। অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু হয়েছিল অনেক রোগীর। করোনায় মারা গেছেন এমন ব্যক্তিদের মৃতদেহ চিতায় পোড়ানোর জন্য শ্মশানগুলোতে দিন-রাত জ্বলছিল কাঠের আগুন।
এর আগে ২৫ এপ্রিল শত্রুতা ভুলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে ছিল পাকিস্তান। নয়াদিল্লিকে ভেন্টিলেটর, ডিজিটাল এক্স-রে কিটসহ পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইক্যুপমেন্ট (পিপিই) ও বিভিন্ন চিকিৎসাসহায়ক সামগ্রী পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিল ইসলামাবাদ।
এর এক দিন আগে পাকিস্তানের নেটিজেনরাও প্রতিবেশী ভারতকে সাহায্যের জন্য বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্তা দিয়েছিলেন।
এ সময় পাকিস্তানের ইধি ফাউন্ডেশন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, এমন বিপর্যয়ে তারা ভারতবাসীর পাশে দাঁড়াতে ৫০টি অ্যাম্বুলেন্স ও কর্মী পাঠিয়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত। ইধি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন দেশটির প্রয়াত সমাজসেবী আবদুল সাত্তার ইধি।
করোনায় ৪ লাখ মৃত্যু ছাড়াল ভারতে
ভারতে করোনাভাইরাসে প্রাণহানি চার লাখ ছাড়িয়েছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ কোটি ৪ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি মানুষের শরীরে।
করোনায় প্রাণহানিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পরই অবস্থান ভারতের। ভাইরাসটিতে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা ৬ লাখ ২১ হাজারের কাছাকাছি আর ব্রাজিলে এ সংখ্যা ৫ লাখ ২০ হাজারের বেশি।
সংক্রমণের দিক থেকে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র থাকলেও খুব একটা দূরে নয় ভারত। যুক্তরাষ্ট্রে ৩ কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজারের বেশি শনাক্ত হয়েছে, দ্বিতীয় অবস্থানে ভারত, তারপরেই ব্রাজিল।