ভোট বিপর্যয়ের পর্যালোচনা হলো না মঙ্গলবারের বিজেপির কার্যকারণ বৈঠকে। শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে জমে থাকা ক্ষোভ উগরে দিতে পারলেন না রাজ্য নেতৃত্ব। রাজ্যে বিরোধী দল হতে পারার সাফল্য তুলে ধরা হলো বৈঠকে।
বিজেপির দুইশর বেশি আসনে বিধানসভা নির্বাচনে জিতে পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠনের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। ১০০ আসনের নীচে থেমে গেছে বিজেপির বিজয়রথ। বাস্তব মেনে না নিতে পেরে রাজ্য নেতৃত্ব বনাম বহিরাগত শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সংঘাত লাগে।
রাজ্যজুড়ে বিজেপিতে ভাঙ্গন শুরু হয়। বিজেপি ছেড়ে রাজ্যে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করা তৃণমূল কংগ্রেসের যোগ দেয়ার হিড়িক পড়ে যায়। এই আবহে মঙ্গলবার কলকাতার হেস্টিংসে বিজেপির প্রধান কার্যালয়ে রাজ্যে ভোট বিপর্যয়ের কারণ খুঁজতে বৈঠকে বসে বিজেপি।
রাজ্য নেতৃত্বকে কাজে না লাগিয়ে লবিবাজি, শীর্ষ নেতৃত্বের বাড়াবাড়ি আর ভুল সিদ্ধান্ত বিজেপির সরকার গঠনের স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার কারণ বলে মনে করেন অনেক রাজ্য নেতা। তাই রাজ্য নেতাদের ক্ষোভের মুখে পড়ার সম্ভাবনায় রাজ্য বিজেপির কার্যকারণ বৈঠক এড়িয়ে গেলেন অনেক বহিরাগত শীর্ষ নেতা।
আবার উপস্থিত থেকে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য রাজ্য নেতৃত্বের ঘাড়ে দায় চাপালেন কেউ কেউ।
যেমন রাজ্য বিজেপির সহপর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন সশরীরে সভায় উপস্থিত থেকে ভোট বিপর্যয়ের দায় রাজ্য নেতৃত্বের ঘাড়ে চাপিয়ে একটি গল্প শোনান।
তিনি বলেন, ‘বহু বছর আগে পায়েস তৈরির জন্য সব গ্রামের মোড়লদের কাছে এক ঘটি করে দুধ চেয়েছিলেন এক রাজা। রাজার বাড়িতে রাখা একটি বড় পাত্রে গ্রামের মোড়লরা এক ঘটি করে দুধ ঢেলে দিয়ে যান। পরে পায়েস তৈরির সময় দেখা যায় পাত্রটি জলে ভরা। এক ফোঁটাও দুধ নেই। দুধের বদলে জল ঢেলে দিয়ে গেছেন মোড়লরা।’
এই গল্প শুনিয়ে মেননের বক্তব্য, ‘রাজ্য বিজেপির ঠিক এরকমই দশা। প্রত্যেকে ভেবেছিলেন আমি ফাঁকি দিলেও রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসছে।’ এই বক্তব্যে রাজ্য নেতৃত্বের মুখে কোনো প্রতিবাদ শোনা যায়নি।
উপস্থিত থাকেননি আরেক পর্যবেক্ষক শিবপ্রকাশ। সভার শেষ দিকে সামান্য সময়ের জন্য ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। কিন্তু তিনি কোনো বক্তব্য রাখেননি। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডা সমাপ্তি ভাষণ দেন।
বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বাংলার নেতাদের কথা যেমন শোনার অবকাশ দেননি, আবার নিজেরাও কিছু বলেননি।
উত্তরবঙ্গ বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘কার্যকারণ বৈঠকে জেলা সভাপতিদের মতামত শোনা হয়। এটাই রীতি। এবারই ব্যতিক্রম। আমরা সবাই নিরব ছিলাম। শীর্ষ নেতৃত্বের চর্বিত চর্বণ ছাড়া বৈঠকে কিছু হয়নি।’
জেলা স্তরে নেতাদের ধারণা ছিল, নির্বাচনে বিপর্যয়ের চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে।
এ দিনের বৈঠকে দিলীপ ঘোষ বিজেপির রাজ্য সভাপতি উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, ‘৭৭ জন বিধায়ক নিয়ে বিজেপি বিধানসভায় গিয়েছে। এত শক্তি নিয়ে কোনো বিরোধী পার্টি প্রবেশ করতে পারেনি। ২০০ আসনের টার্গেট ছিল। অর্ধেক পৌঁছেছি। মানুষ আমাদের সরকারে দায়িত্বশীল বিরোধী দল হিসেবে দেখতে চেয়েছে।’
রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের মত, রাজ্যে সরকার গঠনে আত্মবিশ্বাসী দলের পরাজয়ের কারণ না খুঁজে বিরোধীদল হওয়ার সাফল্য তুলে ধরা হচ্ছে। যদিও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘জেলা ধরে ধরে হারের কারণ পর্যালোচনা করা হবে।’
সমাপ্তি ভাষণে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডা ভার্চুয়ালি বলেন, ‘২০১৬ সালে দলের তিন জন বিধায়ক ছিল। ১০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। এবার ২০২১ সালে ৩৮.১ শতাংশ ভোট পেয়েছে। দুই কোটি ২৭ লাখ মানুষ ভোট দিয়েছে। ৩ থেকে বেড়ে ৭৭ টি আসন হয়েছে।
‘অল্প সময়ে বিজেপি লম্বা সফর শেষ করেছে। কংগ্রেস বিজেপির কাছে শেষ হয়ে গেছে। এখন আমাদের সামনে শুধু তৃণমূল রয়েছে লড়াইয়ের ময়দানে।’