সপ্তাহ না পেরোতেই আবারও কানাডার আদিবাসী-অধ্যুষিত এলাকায় দুটি ক্যাথলিক গির্জায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে গির্জা দুটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় শনিবার এক ঘণ্টার মধ্যে পরপর দুটি গির্জায় আগুন লাগে। প্রথমে সেইন্ট অ্যান’স চার্চ, তারপর চোপাকা চার্চ আগুনে পোড়ে।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইচ্ছে করে আগুন লাগানো হয়েছে বলেই প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করছে পুলিশ।
এর আগে গত সোমবার একই প্রদেশের আরও দুই ক্যাথলিক চার্চ আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়।
চারটি গির্জায় আগুন লাগার মধ্যে যোগসূত্র খুঁজছে পুলিশ। কোনো ঘটনাতেই এখন পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তার বা অভিযোগ গঠন করা হয়নি।
কানাডার আদিবাসী-অধ্যুষিত দুটি প্রদেশে প্রায় এক হাজার অচিহ্নিত পুরোনো কবর শনাক্তের সময়েই বিভিন্ন ক্যাথলিক চার্চে আগুন ধরানো হয়েছে। একসময় আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহৃত দুটি এলাকায় গত এক মাসে দুটি সমাধিক্ষেত্রে সন্ধান মেলে এসব কবরের।
এর মধ্যে মে মাসে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার স্কুলটিতে সন্ধানপ্রাপ্ত ২১৫টি কবরই আদিবাসী শিশুদের। চলতি সপ্তাহে সাসকাচোয়ান প্রদেশেও একটি স্কুলপ্রাঙ্গণে শনাক্ত হয় ৭৫১টি কবর, যার বেশির ভাগই আদিবাসী শিশুদের বলে মনে করা হচ্ছে।
উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর বড় সময়জুড়ে বাধ্যতামূলক ছিল আবাসিক শিক্ষাব্যবস্থা। সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত স্কুলগুলোর বেশির ভাগই নিয়ন্ত্রণ করত বিভিন্ন রোমান ক্যাথলিক চার্চ।
অভিযোগ রয়েছে, আদিবাসীদের নির্মূল প্রচেষ্টা হিসেবে জোর করে ধরে আনা হতো এসব স্কুলে।
এমনই দুটি স্কুলপ্রাঙ্গণে সমাধিক্ষেত্রে হাজারও অচিহ্নিত কবর আবিষ্কারের ঘটনায় ক্ষুব্ধ কানাডার বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠী। দাবি উঠেছে, দেশজুড়ে এ ধরনের সব কবরের সন্ধান করার।
১৮৩১ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত কানাডাজুড়ে আবাসিক শিক্ষাব্যবস্থার আওতায় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় দেড় লাখ আদিবাসী শিশুকে। তাদের জোর করে খ্রিষ্টানদের আবাসিক স্কুলে রেখে দেয়া হতো, খেতে দেয়া হতো না। তাদের ওপর চালানো হতো শারীরিক ও যৌন নির্যাতন।
২০০৮ সালে চালু হওয়া এ বিষয়ক একটি কমিশন জানায়, এই আদিবাসী শিশুদের বেশির ভাগই আর কোনো দিন পরিবারের কাছে ফিরতে পারেনি।
এ চর্চাকে আখ্যা দেয়া হয়েছে ‘সাংস্কৃতিক জেনোসাইড’ হিসেবে।
এসব ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়েছে কানাডা সরকার।