বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিজেপির ‘বঙ্গভঙ্গে’র রাজনীতিতে বঞ্চিত উত্তরবঙ্গ

  •    
  • ২৬ জুন, ২০২১ ১৭:২২

রাজনৈতিক বিশ্লেষক নবেন্দু গুহ বলেন, ‘উত্তরবঙ্গ অবহেলিত এইটা কংগ্রেসের আমলে সিপিএম খেলেছে, সিপিএমের আমলে কংগ্রেস-তৃণমূল খেলেছে, যে যার মতো তাস খেলেছে। উত্তরবঙ্গ নিয়ে সব রাজনৈতিক দলগুলো প্রাকটিক্যালি তাস খেলেছে, বিজেপিও খেলছে।’

উত্তরবঙ্গের শোষণ বঞ্চনার ইতিহাস সুদীর্ঘ। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির স্বপ্নভঙ্গের পর সম্প্রতি উত্তরবঙ্গে আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবি তুলেছেন দলটির আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লার। এছাড়া জঙ্গলমহলেও আলাদা রাজ্যের দাবি বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁর।

এ নিয়ে রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে হইচই। তবে এ ব্যাপারে একেবারেই চুপ উত্তরবঙ্গের মানুষ। কারণ পাহাড়ের মানুষ বুঝেছে হইচই হলেও বাস্তবে কোনো উন্নয়ন হয়নি।

উত্তরবঙ্গের বঞ্চনা প্রসঙ্গে অঞ্চলটির মানুষ কলকাতার বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক নবেন্দু গুহ বলেন, ‘উত্তরবঙ্গ অবহেলিত এইটা কংগ্রেসের আমলে সিপিএম খেলেছে, সিপিএমের আমলে কংগ্রেস-তৃণমূল খেলেছে, যে যার মতো তাস খেলেছে। উত্তরবঙ্গ নিয়ে সব রাজনৈতিক দলগুলো প্রাকটিক্যালি তাস খেলেছে, বিজেপিও খেলছে।’

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি উত্তরবঙ্গে অভূতপূর্ব ফল করে। আটটি আসনের মধ্যে সাতটি আসন পায় দলটি। একটি আসন পায় কংগ্রেস। তৃণমূল কোনো আসনেই জিততে পারেনি।

উত্তরবঙ্গের আটটি লোকসভা আসনের বিপরীতে ৫৪টি বিধানসভা আসন। লোকসভা ভোটের ফল অনুযায়ী নিজেদের উত্তরবঙ্গে প্রভাবশালী দল বলে দাবি করা বিজেপি বিধানসভা ভোটে ৩০টির বেশি আসনে জিততে পারেনি।

সাংবাদিক নবেন্দু গুহ বলেন, ‘লোকসভা নির্বাচনের পর উত্তরবঙ্গে বিজেপির এক্সপেক্টেশন ছিল, সব কটা বিধানসভা আসন তাদের দখলে আসবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেটি হয়নি। হয়নি বলে, এখন বিজেপি উত্তরবঙ্গ ইস্যু তুলে বাজিয়ে দেখতে চাইছে রাজ্য রাজনীতিতে এর কী ফল হয়।’

তিনি বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে বিজেপির সমর্থন কতটা আছে, দেখে নিতে চাইছে বিজেপি। আসলে আমাদের দেশে পুরোটাই ভোটের রাজনীতি।’

রাজ্যজুড়ে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। তৃণমূল নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘প্রাণ থাকতে, বঙ্গভঙ্গ হতে দেব না।’

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, ‘দল বঙ্গভঙ্গ সমর্থন করে না। কেউ যদি বলে থাকেন, তা তাদের ব্যক্তিগত মত। দলের নয়।’

উত্তরবঙ্গ ইস্যুতে বিজেপি বিরোধিতার সুর ছড়িয়েছে কংগ্রেস-সিপিএমেও।

শোনা যাচ্ছে, বঙ্গভঙ্গ ইস্যুতে বিজেপির অন্দরেও মতবিরোধ চওড়া হচ্ছে। ২৯ জুন রাজ্য বিজেপির কার্যনির্বাহী বৈঠক। এতে উপস্থিত থাকবেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। সেখানে উত্তরবঙ্গ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা যাচ্ছে।

বঙ্গভঙ্গ ইস্যুতে দ্বিধা-বিভক্ত বিজেপি। যারা এটা ভাবছেন, তারা ঠিক ভাবছেন না বলে মনে করেন অনেকে। কেননা বিজেপি যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এই চালটা দিয়েছে। বঙ্গভঙ্গ দলের মত নয়, ব্যক্তিগত মত। এটা ওরা প্রচারও শুরু করে দিয়েছে। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব উত্তরবঙ্গ ইস্যু ব্যক্তিগত মত বললেও তাদের নেতাদের চুপ থাকতে বলছে না।

২০০৯ সালে বিজেপি ঘোষণা করে দেশে তাদের নীতি ছোট ছোট রাজ্য গঠনের পক্ষে। ক্ষমতায় এলে গোর্খাল্যান্ড গঠন করবে বলেও ঘোষণা দিয়েছিল দলটি।

গোর্খাল্যান্ড ভারতীয় গোর্খা জনগোষ্ঠীর জাতিগত, ভাষাগত অধিকারের ভিত্তিতে বাংলা থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র রাজ্য গঠনের দাবি শতাব্দী প্রাচীন। ১৯৮৬ সালে গোর্খাল্যান্ড আলাদা রাজ্যের দাবিতে গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের (জিএনএলএফ) হাত ধরে সুবাস ঘিষিংয়ের নেতৃত্বে পাহাড়ে সহিংস আন্দোলন গতি পায়। এই আন্দোলনে প্রাণ হারান বহু মানুষ।

১৯৮৮ সালে দার্জিলিং হিল কাউন্সিল গঠন করে আধাস্বায়ত্তশাসন দেয়া হলে পাহাড়ে শান্তি ফেরে। ২০০৭ সালে বিমল গুরুংয়ের নেতৃত্বে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা আবার গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।

অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো নিয়ে স্বতন্ত্র কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে কামতাপুর পিপলস পার্টি এবং কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন হিংসাত্মক হয়ে উঠেছিল। কামতাপুর রাজ্য গঠনের দাবি আসলে ওই অঞ্চলের অনগ্রসর ক্রমাগত পিছিয়ে পড়া অবহেলিত জনগোষ্ঠীর স্বতন্ত্রতার দাবি।

এখন জন বার্লা, সৌমিত্র খাঁদের বঙ্গভঙ্গ ইস্যুতে উত্তরবঙ্গ নিয়ে বিজেপি কতদূর যেতে পারে সেটি নিয়ে সংশয় রয়েছে। ২০২৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা ভোট।

সাংবাদিক নবেন্দু গুহ বলেন, ‘বিজেপি কখনোই এটা করবে না। উত্তরবঙ্গের ওই কটা আসনের জন্য আদার পার্ট অফ বেঙ্গলের আসন হাতছাড়া করবার মতো বোকামি তারা করবে না। উত্তরবঙ্গের জন্য দক্ষিণবঙ্গের অতগুলো আসন খোয়াবে কেন?’

রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী তৃণমূল নেতা গৌতম দেব অবশ্য বলেন, ‘আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণার দাবি আসলে উত্তরবঙ্গকে অশান্ত করার চেষ্টা। এটি বিজেপির গেম প্ল্যান।’

অনেকেই বলছেন, মমতা ব্যানার্জির কাছে ভোটে হেরে হতাশ বিজেপি। এমন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে কর্মীদের চাঙ্গা করতে বঙ্গভঙ্গ ইস্যুতে উত্তরবঙ্গকে সামনে আনা হয়েছে। বিজেপির কর্মীরা এতে কতটা চাঙ্গা হবে, সেটা সময়ই বলবে। পাহাড়ের মানুষ কিন্তু এই ইস্যুতে একেবারেই নীরব।

উত্তরবঙ্গের সন্তান নবেন্দু গুহ বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের মানুষ যে বঞ্চনার শিকার সেই বঞ্চনাতেই রয়েছে। আমাদের কিছু হয়নি। উত্তরবঙ্গ শোষিত-বঞ্চিত, এটি নিয়ে সবাই রাজনীতি করছে। কিন্তু বাস্তবে উত্তরবঙ্গের কোনো উন্নয়ন কেউ করেনি।’

এ বিভাগের আরো খবর