কানাডার সাসকাচোয়ান প্রদেশে একটি স্কুলপ্রাঙ্গণে আবিষ্কৃত কবরের সংখ্যা সাড়ে সাত শর বেশি।
প্রদেশটিতে এ ধরনের কবর শনাক্তের ঘটনা এটাই প্রথম।
কানাডার সাম্প্রতিক ইতিহাসেও এর আগে একসঙ্গে এত বেশি অচিহ্নিত কবর শনাক্ত হয়নি।
স্থানীয় আদিবাসীদের সংগঠন কাওয়েসেস ফার্স্ট নেশন স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে এসব তথ্য।
সংগঠনটির প্রধান কাডমুস ডেলোরমির বরাত দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, শনাক্ত ৭৫১টি কবরের মধ্যে শিশুদের কবর কতগুলো, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
লোকমুখে ছড়ানো ঘটনা সত্য হলে সেখানে অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কবরও থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঘটনাস্থল মেরিভ্যাল ইন্ডিয়ান রেসিডেন্সিয়াল স্কুল আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে ১৮৯৯ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত।
নানান বিতর্কের মুখে রোমান ক্যাথলিক চার্চ পরিচালিত স্কুলটি ১৯৯৯ সালে ভেঙে দিয়ে চালু করা হয় অনাবাসিক একটি স্কুল। সেখানে রয়ে গেছে গির্জা, ধর্মযাজকব্যবস্থা আর সমাধিস্থল।
ডেলোরমির অভিযোগ, যে গির্জা কর্তৃপক্ষের অধীনে মেরিভ্যাল ইন্ডিয়ান রেসিডেন্সিয়াল স্কুল পরিচালিত হতো, তারাই অচিহ্নিত এসব কবরের সমাধিফলক সরিয়েছে।
বিষয়টির মীমাংসায় পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সমাধিফলক সরানো কানাডার আইনে অপরাধ। এই সমাধিক্ষেত্রকে তাই অপরাধস্থল বলে মনে করছি আমরা।’
অচিহ্নিত কবর শনাক্তে ব্যবহার করা হয়েছে গ্রাউন্ড-পেনিট্রেটিং রাডার। যন্ত্রটি মেরিভ্যালের মাটিতে মোট ৭৫১টি জায়গা কবর হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বলা হচ্ছে, ১০ শতাংশ যান্ত্রিক ত্রুটি ধরে নিলেও ছয় শতাধিক কবর আছে এলাকাটিতে।
মে মাসে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের কামলুপসে আদিবাসী শিশুদের একটি আবাসিক স্কুলপ্রাঙ্গণে অপ্রাপ্তবয়স্ক ২১৫ জনের দেহাবশেষের সন্ধান মেলে। এরপরই কানাডায় আদিবাসীদের ওপর একসময়ের ঔপনিবেশিক বর্বরতার বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে।
একসময়ের মেরিভ্যাল ইন্ডিয়ান রেসিডেন্সিয়াল স্কুলপ্রাঙ্গণে শ শ কবর শনাক্তের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
তিনি বলেন, ‘যে আঘাত ও মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে কানাডার আদিবাসীরা যাচ্ছেন, সে বোঝা কমানোর দায়িত্ব পুরো দেশের।’
১৮৩১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কানাডার আবাসিক শিক্ষাব্যবস্থার আওতায় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছিল দেড় লাখ আদিবাসী শিশুকে। তাদের জোর করে খ্রিষ্টানদের আবাসিক স্কুলে রেখে দেয়া হতো, খেতে দেয়া হতো না; চালানো হতো শারীরিক ও যৌন নির্যাতন।
কানাডার তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করত ক্যাথলিক চার্চগুলো।
সাসকাচোয়ান প্রদেশের ৭৪টি আদিবাসী গোষ্ঠীর জোট ফেডারেশন অব সভরেইন ইনডিজেনাস নেশন্সের (এফএসআইএন) প্রধান ববি ক্যামেরন বলেন, ‘আদিবাসীদের নির্মূল করার চেষ্টা চালানো একটি জাতি হিসেবে একদিন পরিচিত হবে কানাডা। এটা তো কেবল শুরু।’