যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র সহিংসতা বাড়তে থাকার মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ সংবলিত নতুন পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বুধবার এ পরিকল্পনার কথা জানান বাইডেন।
এর আগে হোয়াইট হাউসে অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড ও বিভিন্ন শহরের মেয়র আর নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট।
ফ্রান্স টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, কংগ্রেসে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের বাধায় কয়েক সপ্তাহ আটকে ছিল এ প্রস্তাব। প্রেসিডেন্টের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চেষ্টা সংবিধানের পরিপন্থি বলে যুক্তি তাদের।
এ বিষয়ে বাইডেন বলেন, ‘সুযোগের অপব্যবহারকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনব আমরা। এতে সংবিধান বদলানো হবে না; বরং সংবিধানের সঠিক বাস্তবায়ন হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহরগুলোতে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে নির্বিচার হত্যা, আত্মহত্যা ও সশস্ত্র ডাকাতির ঘটনায় উদ্বেগ বাড়তে থাকার মধ্যেই এলো এ ঘোষণা।
যুক্তরাষ্ট্রের গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে গুলিতে প্রাণ গেছে ২১ হাজারের বেশি মানুষের। এর মধ্যে আত্মহত্যা করেছে সাড়ে ১১ হাজার মানুষ; নির্বিচার গুলিতে নিহত হয়েছে সাড়ে ৯ হাজারের বেশি।
মার্চেই আটলান্টায় বন্দুকধারীর হামলায় নিহত হয় ৬ এশীয় বংশোদ্ভূতসহ ৮ আমেরিকান।
বাইডেন জানান, ২০২০ সালের প্রথম তিন মাসের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে গুলিতে প্রাণহানি বেড়েছে ২৪ শতাংশ। এ অবস্থায় কঠোর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের বিকল্প নেই।
বিরোধী আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় আমেরিকান নাগরিক হিসেবে জাতীয় স্বার্থে ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিবান একজোট হওয়ার এটাই সুযোগ। পরস্পরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে গণতন্ত্রের সুরক্ষায় সরকারকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিন।’
করোনাভাইরাস মহামারি ও লকডাউনের প্রভাবে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের গত দেড় বছরে যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বেই বেড়েছে সহিংসতা।
বাইডেন বলেন, ‘মহামারি থেকে বেরিয়ে আসছি আমরা। এখনই সহিংসতা বন্ধের উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতে আগ্নেয়াস্ত্র সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে।’
পরিকল্পনায় করোনাকালীন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য বরাদ্দের যে অংশ খরচ হয়নি, তা অপরাধ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে পুলিশের পেছনে ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস, আটলান্টা, বাল্টিমোর ও রাজধানী ওয়াশিংটনসহ ১৫টি শহরের মহামারিকালীন বরাদ্দকৃত অর্থের উদ্বৃত্ত সমন্বয়ের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করবে কেন্দ্রীয় সরকার।
এ ছাড়া গুলির শব্দ শনাক্তের পদ্ধতিসহ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা আর অস্ত্র চোরাচালানকারীদের বিচারের আওতায় আনারও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
বাইডেন জানান, বিভিন্ন অপরাধস্থল থেকে জব্দ ৯০ শতাংশ অবৈধ অস্ত্রের ৯৫ শতাংশই অনিবন্ধিত।
২০১২ সালে কানেকটিকাটের একটি স্কুলে বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ শিশু নিহতের পর থেকে গত ৯ বছরে অসংখ্যবার আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোর করার চেষ্টা করেছে ডেমোক্র্যাটরা। কিন্তু বারবার ঐক্যবদ্ধভাবে সেসব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয় রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা।
চলতি বছরের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে দুটি বিল পাস হয়। ২০১৫ সালে সাউথ ক্যারোলাইনার চার্লসটনে একটি গির্জায় আগ্নেয়াস্ত্র হামলায় প্রাণহানির ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিল দুটি। বিলে সম্ভাব্য ক্রেতার তথ্য যাচাই সাপেক্ষে আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রির কথা বলা হয়েছে।
পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে বিলটি পাসে সব ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতাসহ কমপক্ষে ১০ জন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারও সমর্থন দরকার হবে। ফলে এটি আইন হিসেবে কার্যকর হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।