বেশির ভাগ দরিদ্র দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার মজুত শেষ হয়ে আসছে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
সংস্থাটি জানিয়েছে, টিকা কার্যক্রম চালু রাখার মতো পর্যাপ্ত ডোজ নেই দেশগুলোর।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এ তালিকায় আছে বাংলাদেশও।
করোনার বিস্তার রোধে টিকার সুষম বণ্টন নিশ্চিতে কোভ্যাক্স কর্মসূচি পরিচালনা করছে জাতিসংঘ। এর আওতায় মোট জনসংখ্যার তুলনায় স্বল্প পরিমাণে কিছু ডোজ পৌঁছেছে বিশ্বের শতাধিক দেশে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচওর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ড. ব্রুস আইলওয়ার্ড জানান, কোভ্যাক্স থেকে এ পর্যন্ত ১৩১টি দেশে ৯ কোটি ডোজ টিকা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে যে পরিমাণ জনগোষ্ঠীর জন্য অবিলম্বে টিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করা দরকার, তার ধারেকাছেও পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
কোভ্যাক্সের তালিকাভুক্ত স্বল্প আয়ের ৮০টি দেশের অর্ধেকেই টিকা কার্যক্রম সচল রাখার মতো পর্যাপ্ত ডোজ নেই।
গত কয়েক দিনে টিকার মজুত শেষের দিকে বলে জানানো দেশগুলোর অন্যতম উগান্ডা, জিম্বাবুয়ে, বাংলাদেশ ও ত্রিনিদাদ-টোবাগো।
ড. আইলওয়ার্ড বলেন, ‘এসব দেশ থেকে প্রতিদিনের পাওয়া তথ্যের দিকে তাকালে আমরা দেখছি, অর্ধেকের বেশি দেশে মজুত শেষ। তারা বারবার আরও টিকার জন্য আকুতি জানাচ্ছে। বাস্তবতা হলো এই যে, অতিরিক্ত কিছু টিকা নিশ্চিত করা গেলেও তাতেও সংকট মিটবে না।’
টিকার ঘাটতি মেটাতে বাধ্য হয়ে কিছু দেশ বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে ডোজ কেনার মতো বিকল্প পথ বেছে নিচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন ড. আইলওয়ার্ড।
তিনি জানান, এমন পদক্ষেপ হিতে বিপরীত হতে পারে দেশগুলোর জন্য।
গত বছর চালু হওয়া কোভ্যাক্স কর্মসূচির অধীনে ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে ভর্তুকি আদায়ের মাধ্যমে দরিদ্র দেশগুলোতে টিকা সহজলভ্য করার চেষ্টা চলছে। জাতিসংঘ, ডব্লিউএইচওসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার নেতৃত্বে চলমান এ কর্মসূচি।
কোভ্যাক্সের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল দরিদ্র দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ২০২১ সালের শেষ নাগাদ ২০০ কোটি ডোজ টিকা পাঠানো। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে এসব দেশের কমপক্ষে ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকা সুরক্ষা দেয়ার আশা করা হচ্ছিল।
কিন্তু উৎপাদনে বিলম্ব, সরবরাহে বিঘ্নের মতো কারণে টিকার বণ্টন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে টিকা কর্মসূচির জন্য পুরোপুরি কোভ্যাক্সনির্ভর দেশগুলোতে ডোজের ব্যাপক ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
আফ্রিকা মহাদেশে মহামারির তৃতীয় ধাক্কা শুরুর মধ্যেই নতুন করে টিকার ঘাটতির বিষয়টি সামনে এলো।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা সোমবার ধনী দেশগুলোকে টিকা মজুতের প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান। দেশটিতে সম্প্রতি ব্যাপক হারে বেড়েছে করোনার সংক্রমণ।
রামাফোসা বলেন, পুরো আফ্রিকায় মাত্র ৪ কোটি মানুষ করোনার টিকা নিয়েছেন, যা মহাদেশটির মোট জনগোষ্ঠীর ২ শতাংশও নয়। এ অবস্থায় দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি আঞ্চলিক টিকা উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তুলতে কোভ্যাক্সের সঙ্গে কাজ করছে তার সরকার।
টিকার ঘাটতি কমাতে কোভ্যাক্সসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নিজেদের উদ্বৃত্ত টিকা বিনা মূল্যে দরিদ্র দেশগুলোকে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ।
সাড়ে ৫ কোটি ডোজ বণ্টনের বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। দেশটি জানিয়েছে, ৪ কোটি ১০ লাখ ডোজ বণ্টন করা হবে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে। বাকি ১০ কোটি ৪০ লাখ ডোজ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে।
বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির সাত দেশের জোট জি সেভেন চলতি বছর দরিদ্র দেশগুলোকে ১০০ কোটি ডোজ টিকা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। এর মধ্যে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে আরও ৫০ কোটি ডোজ দেয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্রের।