সাবেক প্রধান বিচারপতি কট্টর রক্ষণশীল ইব্রাহিম রাইসিকে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেছে ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
শনিবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে তথ্য জানানো হয়েছে।
ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নির্বাচনে ৬১ দশমিক ৯৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন রাইসি। এবারের নির্বাচনে ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে, যা ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পরে সর্বনিম্ন ভোট পড়েছে এবার।
আগস্টে দেশটির মধ্যপন্থি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেবেন তিনি।
সমালোচকদের ভাষ্য, রাইসিকে জেতানোর জন্য তার শক্ত প্রতিপক্ষদের নির্বাচনে দাঁড়াতে দেননি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি।
তবে পশ্চিমাদের টক্কর দিতে ও অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত দেশকে পুনরুদ্ধারে রাইসির বিকল্প নেই বলে মনে করেন তার সমর্থকেরা।
সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদল রেজা রাহমানি-ফাজলি বলেন, ‘নির্বাচনে এমন কিছু ঘটে নি, যা ফলাফলের ওপরে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।’
ইরানের অনেক সংবাদমাধ্যম মনে করে, সামনের মাসে ৮২ বছরে পা দিতে যাওয়া সর্বোচ্চ নেতা খামেনির সম্ভাব্য উত্তরসূরি হতে পারেন রাইসি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক কাউন্সিলের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ইরানের অন্যান্য রক্ষণশীলদের মতো রুহানি শিবিরের কড়া সমালোচনা করেন রাইসি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি রুহানির শান্তিপ্রয়াসী বন্ধুত্বপূর্ণ নীতি মানেননি তিনি।
এ ছাড়া খামেনির যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী নীতির সমর্থন করেন রাইসি।
ইরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পবিত্র শহর মাশহাদে ১৯৬০ সালে জন্মগ্রহণ করেন রাইসি। তরুণ বয়সেই উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি হয় তার।
১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত রাজতন্ত্রকে ক্ষমতাচ্যুত করে ইরানের ইসলামিক বিপ্লব। সে সময় রাইসির বয়স ছিল মাত্র ২০ বছর। রাজধানী তেহরানের উপকণ্ঠে আলবোর্জ প্রদেশের রাজধানী খারাজের প্রসিকিউটর-জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান রাইসি।
১৯৮৮ সালে মার্ক্সবাদী ও বামপন্থিদের গণফাঁসির ঘটনায় অবধারিতভাবেই রাইসির নাম নেন অধিকার সংগঠন ও ইরান থেকে নির্বাসিত বিরোধী মতাবলম্বী ব্যক্তিরা। রাইসি সে সময় তেহরানের রেভ্যুলুশনারি কোর্টের ডেপুটি প্রসিকিউটর ছিলেন।
আশির দশকের গণফাঁসি ও পরবর্তী সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে রাইসিসহ কয়েকজনের ওপর ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
২০১৯ সালে রাইসিকে ইরানের প্রধান বিচারপতি করেন খামেনি। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা মনোনয়ন দেয়া বিশেষজ্ঞ কমিটিরও সদস্য রাইসি।
তেহরানের শাহিদ-বেহেশ্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক জামিলেহ আলামোলহোদাকে বিয়ে করেন রাইসি। তাদের দুটি মেয়ে আছে।