মিয়ানমারের ওপর নেওয়া জাতিসংঘের বিবৃতিতে সই করেনি ভারত, চীন ও রাশিয়া।
ভারত জানিয়েছে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে মিয়ানমার ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই আন্তর্জাতিক মঞ্চের উচিত আরও গঠনমূলক আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
যদিও জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টি এস তিরুমূর্তি বলেন, ‘মিয়ানমার নিয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। সে দেশে বন্দি গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতিনিধিদের মুক্তির দাবি জানানো হচ্ছে। হিংসা কখনই সমর্থনযোগ্য নয়। মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফেরাতে সবরকমভাবে চেষ্টা করে যাবে ভারত।’
জাতিসংঘের গৃহীত বিবৃতিতে অবিলম্বে মিয়ানমারে গণতন্ত্রের পক্ষে সওয়াল করা হয়েছে। সেই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর উচিত মানুষের ইচ্ছাকে সম্মান করা। গত বছর ৮ নভেম্বরে হওয়া সাধারণ নির্বাচনের ফল মেনে জরুরি অবস্থার অবসান ঘটানো।
‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সামরিকতন্ত্র থেকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের পার্লামেন্টে যেতে দেওয়া। পাশাপাশি প্রজাতন্ত্রকে প্রাধান্য দিয়ে সব জাতীয় প্রতিষ্ঠান এমনকি সামরিক বাহিনীকে কাজ করতে দেওয়া।’
এই বিবৃতিতে সই করেছে বিশ্বের ১১৯টি দেশ। ভোটদানে বিরত থেকেছে ৩৬টি দেশ। একমাত্র বেলারুশ বিবৃতির বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। ভারত, রাশিয়া-সহ চীন সই দেয়া থেকে বিরত ছিল।
ফেব্রুয়ারি মাসে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে অন্তত ৪ থেকে ৬ হাজার মিয়ানমারের শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। এমনটাই জানিয়েছে জাতিসংঘ। বিশ্বসংস্থাটির মহাসচিবের মুখপাত্র জানিয়েছেন, মিয়ানমারে সেনাদের নির্যাতন যেভাবে বেড়েছে তাতে বহু মানুষ দেশ ছেড়ে শরণার্থী হয়েছেন প্রতিবেশী দেশগুলোতে।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক দপ্তর জানিয়েছে, মে মাসের প্রথম সপ্তাহের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কমপক্ষে ৬০ হাজারের বেশি মহিলা-শিশু এবং পুরুষ ঘরছাড়া।
মার্চ-এপ্রিলে ১৭০০-র বেশি শরণার্থী প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকে ফিরেও এসেছেন। ৪ থেকে ৬ হাজার মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক একটি প্রেস বিবৃতিতে একথা বলেন।
ভারতের সঙ্গে মিয়ানমারের ১৬০০ কিমির বেশি দীর্ঘ কাঁটাতারহীন নো মেন্স ল্যান্ড এলাকা রয়েছে। তার পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরও রয়েছে। চারটি উত্তর-পূর্বের রাজ্য অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর এবং মিজোরামের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে মিয়ানমারের।
উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সেনাঅভ্যুত্থানের পর থেকেই মিয়ানমারের পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠে। গণতন্ত্রকামীদের প্রবল বিক্ষোভের পর বার্মিজ সেনার বিরুদ্ধে মোর্চা খুলেছে বেশ কয়েকটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন। সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ডাক দিয়েছে একাধিক বিদ্রোহী সংগঠন। এবার জাতিসংঘেরও চাপের মুখে পড়ে মিয়ানমারের সেনাশাসকরা।