যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম এশীয়-আমেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের আনুমানিক সম্পদের পরিমাণ ৭০ লাখ ডলার। স্বামী সেকেন্ড জেন্টেলম্যান ডগলাস এমহফের সঙ্গে তার যৌথ সম্পদের মধ্যে রয়েছে লসএঞ্জেলেস ও ওয়াশিংটন ডিসিতে ৫০ লাখ ডলারের দুটি বাড়ি।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নরের দায়িত্ব পালন করায় হ্যারিসের একটি ১০ লাখ ডলার সমমূল্যের পেনশন রয়েছে। আর চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ায় তার স্বামী পেয়েছেন ১০ লাখ ২০ হাজার ডলার সমপরিমাণের পেনশন।
ব্যবসাবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাময়িকী ফোর্বসের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
আমেরিকার প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েন জো বাইডেনের রানিং মেট কমলা হ্যারিস। একই সঙ্গে দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ভাইস প্রেসিডেন্টও তিনি।
৫৬ বছর বয়সী ক্যালিফোর্নিয়ার এই সিনেটর ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তার পূর্ব পুরুষের ভিটা তামিলনাডুর তিরুভারু জেলায়। তার মা শ্যামলা গোপালন এই জেলাই থাকতেন একসময়। বাবা জ্যামাইকান। দুজনেই যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী হয়েছেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার অঙ্গরাজ্যের জনবহুল শহর ওকল্যান্ডে এমন এক অভিবাসী বাবা-মায়ের সংসারে জন্ম কমলা হ্যারিসের। জামাইকা ও ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসে নাগরিকত্ব পেয়েছেন তারা। কমলা হ্যারিসের ছোট বোনের জন্মের পরেই তাদের বাবা ও মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
ছোট বোন আর হ্যারিসকে নিয়ে তাদের মা কানাডার মন্ট্রিয়লে চলে আসেন। তখন হ্যারিসের বয়স মাত্র ১২। তাদের মা পেশায় একজন স্তন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ।
কানাডায় স্কুলের পাঠ শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হন হ্যারিস। আইন বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা নিতে তিনি ফিরে যান জন্মস্থান ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে।
১৯৮৯ সালে স্নাতকোত্তর শেষে তিনি কাজ শুরু করেন জন্মস্থান অকল্যান্ডের আলামেডা কাউন্টির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির কার্যালয়ে। ৯ বছর পরে তিনি বদলি হন ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের আরেক জনবহুল শহর সানফ্রান্সিসকোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির কার্যালয়ে।
এ সময় তিনি সো’মা শহরতলিতে প্রায় ৩ লাখ ডলার মূল্যের একটি অ্যাপার্টমেন্ট (কন্ডো) কেনেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর চলতি বছরের মার্চে তিনি সেই কন্ডোটি বেচে দেন তিন গুণ দামে।
২০০৩ সালে স্থানীয় নির্বাচনে জয় পেয়ে তিনি সানফ্রান্সিসকোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির পদে নিযুক্ত হন। এ সময় তার বার্ষিক আয় ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার ডলারের কিছু বেশি। সে সময়কার তার দেয়া আয়করের নথি থেকে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
৭ বছর পর ২০১০ সালে হ্যারিস দেশটির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিযুক্ত হন। এ পদে তিনিই ছিলেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী।
২০১৪ সালে তিনি সংসার শুরু করেন এমহফের সঙ্গে। এতে আরও সম্পদশালী হয়ে ওঠেন তিনি। আগের স্ত্রীর সঙ্গে ঘর ভাঙার সময় এমহফের বার্ষিক আয় ছিল ১০ লাখ ডলার। সে সময় তিনি লসএঞ্জেলেসের একটি বিনোদনমূলক ফার্মের আইনি পরামর্শকের দায়িত্বে ছিলেন।
হ্যারিস বনাম পেন্স
দুই ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও কমলা হ্যারিস তাদের পদের বিপরীতে সরকারের তরফ থেকে ১০ লাখ ডলার করে পেনশন হিসেবে পাবেন।
তবে পার্থক্য হলো যে, বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে আবাসন খাতে।
সিনেটর হওয়ার লড়াইয়ে নামার আগে ২০১৫ সালে হ্যারিস তার সম্পদের হিসাব জমা দেন সরকারের কাছে। এ সময় স্বামী এমহফসহ তাদের যৌথ সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪০ লাখ ডলার।
হ্যারিসের তারকাখ্যাতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে তার আয়ও। ২০১৯ সালে প্রকাশিত তার লেখা আত্মজীবনীমূলক বই দ্য ট্রুথস উই হোল্ডের অন্তত ২ লাখ কপি বিক্রি হয় দেশটিতে। এ তথ্য দিয়েছে এনপিডি বুকস্ক্যান।
২০১৮ সালের পর থেকে কেবল লেখালেখি থেকে বছরে তিনি আয় করতে শুরু করে ৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার। তার আয়কর হিসাব থেকে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
সিনেটর থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে উন্নীত হওয়ার পর তার আয় বেড়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ।
ছোট ছোট ত্যাগ স্বীকার মানুষের জীবনে অনেক বড় ধরনের ফল নিয়ে আসে। জো বাইডেন যখন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন, তখন তার স্ত্রীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতেন। এ সময় তিনি দুটি বই প্রকাশ করেছিলেন। এসব থেকে তাদের চার বছরে আয় ছাড়িয়ে গিয়েছিল ১ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
অন্যদিকে কয়েক মাস আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দেয়ার পর বইয়ের দুটি প্রকাশনীর সঙ্গে মাইক পেন্সের চুক্তি হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ ডলারের।
কোটি নারীর কাছে রোল মডেল হিসেবে সুপরিচিত এক উদ্যমি নারীর নাম কমলা হ্যারিস। এটি বলা বেশি হবে না যে, তিনি দেশটির এমন শীর্ষ পদ থেকে অবসরে যাওয়ার পর তার সঙ্গে শত কোটি ডলারের চুক্তি সই করতে মরিয়া হবে বিভিন্ন প্রকাশনীর কর্ণধারেরা।