মুকুল রায়ের আবার দল বদলে তৃণমূলে পুনর্মিলন, বিজেপিতে ভাঙন আর নেট মাধ্যমে 'দুষ্ট মুকুল' ভাইরাল হয়েছে ।
বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি মুকুল রায় তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরে আসায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে পুনর্মিলনের আনন্দ দেখা দিয়েছে।
উল্টো দিকে বিজেপির মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব আর সংগঠনের দুর্বল দিকটাই বেরিয়ে পড়েছে, যা নিয়ে নেটিজেনরা রঙ্গরসিকতায় ব্যস্ত থেকেছেন সারা দিন। কেননা মুকুল রায়ের হাত ধরেই রাজ্যে বিজেপির নব উত্থান হয়েছিল। তবে বিজেপিতে যাওয়া যে ভুল হয়েছিল, তা অবশ্য স্বীকার করে নেন মুকুল।
এরপর পরম্পরা মেনে গাঠিয়া চিপস দিয়ে মুড়ি মেখে তৃণমূল ভবনে চলে আড্ডা। পুরোনো দিনের গল্প। পুনর্মিলনের আনন্দে মশগুল হয়ে যান তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
পুনর্মিলন আড্ডার পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে মুকুল ও শুভ্রাংশুর তৃণমূলে যোগ দেয়ার কথা ঘোষণা করেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
আর এ সময় মুকুলের তৃণমূলে নাটকীয় প্রত্যাবর্তনে ‘সোনার কেল্লা’ সিনেমার ছোট্ট মুকুলের কথাই ভার্চুয়াল দেয়ালে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে, যেখানে শিশু অভিনেতা কুশল চক্রবর্তীর ছবি দিয়ে নিচে লিখে দেয়া হয়েছে 'আমি বাড়ি যাব' কিংবা 'ওরা দুষ্ট লোক।' আর মুহূর্তেই তা ভাইরাল।
অনেকে বলেন, বাংলা রাজনীতির চাণক্য মমতা। আবার কেউ কেউ বলেন, মুকুল রায় বাংলা রাজনীতির চাণক্য।
সে যে-ই হোক, মমতা-মুকুলের রাজনৈতিক যুগলবন্দী কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারকে ছুড়ে ফেলে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার গঠন করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল ২০১১ সালে।
তাই এই জুটির বিচ্ছেদ বা মিলন ঐতিহাসিক। শুক্রবার তৃণমূল ভবনে তেমনই এক ইতিহাস সৃষ্টি হলো।
বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি মুকুল রায় ও তার ছেলে শুভ্রাংশু রায় বিজেপি ছেড়ে আবার তাদের পুরোনো দল তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। আর তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানান।
২০১৭ সালে মুকুল রায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। প্রায় চার বছর পর মুকুলের আবার তৃণমূলে ফিরে আসা নিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বলেছেন, 'ঘরের ছেলে ঘরে ফিরল। ও আমাদের পুরোনো পরিবারের লোক। ঘরে ফিরে মানসিক শান্তি পেয়েছে।'
মুকুল রায় ও তার ছেলে শুভ্রাংশু রায়ের তৃণমূলের ফেরা নিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা আরও বলেন, 'চরমপন্থি নরমপন্থি বলে একটা ব্যাপার আছে। যারা দলের বিরুদ্ধে গিয়ে নিম্নরুচির আক্রমণ করেছে, সেই গাদ্দারদের ফেরাব না।'
বিজেপি ছেড়ে আবার তৃণমূলে ফেরা নিয়ে মুকুল রায় বলেন, 'বিজেপি করা যায় না, তাই ফিরে এলাম। কেন ফিরলাম তা পরে বিস্তারিত জানাব। নিজের জায়গায় ফিরতে পেরে ভালো লাগছে। বাংলা নিজের জায়গায় ফিরছে। তাদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলার নেত্রী দেশের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।'
বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপিতে ভাঙন ধরেছে। আদি বিজেপি নব্য বিজেপির অন্তর্কলহ প্রকট হয়েছে। মুকুল রায় বিজেপি ছাড়ায় তা প্রকাশ্যে এসে পড়েছে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি মুকুল রায়ের সম্পর্ক একেবারেই ভালো যাচ্ছিল না। দিলীপের কথায়, 'তিনি (মুকুল) থাকায় লাভ তো বিশেষ কিছু হয়নি। ক্ষতি আর কী হবে?'
বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা টুইটবার্তায় বলেন, 'নির্বাচন চলাকালে দু-একজন নেতাকে নিয়ে অতি মাতামাতি এবং যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও লবিবাজি করে বাকিদের বসিয়ে রেখে অবজ্ঞা বা অপমান করার করুণ পরিণতি।'
বিজেপির রাজ্য সহসভাপতি রাজকমল পাঠক বলেন, 'যারা দেশের মানুষের সেবার জন্য একটা আদর্শ নিয়ে পার্টি করে, নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য নয়, তারা দল বদল করে না। এর থেকে আমাদের শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনে এগোতে হবে।'
বিজেপি নেতা অর্জুন সিংহ বলেন, 'মুকুল রায়ের সম্পর্কে সব সময় সন্দেহ ছিল । তিনি আমাদের দলের খবর তৃণমূলে দিতেন। ফলে আমাদের হার হয়েছে।'
বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা তথাগত রায় বলেন, 'মলমূত্র ত্যাগ করলে মানুষ দুর্বল হয় না, সবলই হয়।'
আর এই আশু ভাঙনের প্রতিক্রিয়ায় বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'দু-একজন চলে গেলে কিছু এসে যায় না। আমাদের দল নেতানির্ভর নয়।'
তৃণমূলে অভিষেক-মুকুল বিরোধ নিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বলেন, 'ওদের মধ্যে কোনো দিন বিরোধ ছিল না।' মুকলও সে কথা স্বীকার করেন।
আর তাই রাতে মুকুলের তৃণমূলে ফেরা নিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক টুইট করে লেখেন, 'তৃণমূল পরিবারে মুকুল রায়কে স্বাগত জানিয়ে আমি খুশি। বিজেপিতে তার বিভিন্ন সংগ্রামের সঙ্গে আমরা সহমর্মী। তাকে আশ্বাস দিচ্ছি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভারতবাসীর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষ্যে আমরা দল হিসেবে একসঙ্গে কাজ করব।'
সূত্রের খবর, মুকুল রায় যখন সল্টলেকের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে দল বদলের লক্ষ্যে তৃণমূল ভবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন একের পর এক ফোন আসছিল বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে।
এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও মুকুলকে ফোন করেছিলেন বলে সূত্রের খবর। কিন্তু মুকুল একটিও ফোন ধরেননি।