বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মেয়াদ শেষের আগে ক্ষমতা টেকাতে মরিয়া নেতানিয়াহু

  •    
  • ১২ জুন, ২০২১ ১৪:৪০

বিশ্লেষকরা বলছেন, রোববার নতুন সরকারের শপথ গ্রহণ ঠেকাতে নেতানিয়াহু আর তার সমর্থকরা কতোটা মরিয়া, তারই ইঙ্গিত মিলেছে সম্ভাব্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যে। তার হুমকি দেয়ার এ ভঙ্গি ইসরায়েলের গত এক দশকের রাজনীতিতে অপরিচিত কিছু নয়।

সব ঠিক থাকলে রোববারই সমাপ্ত হবে ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর শাসনকাল। এমন পরিস্থিতিতে তার আভাস, খুব সহজে রাজনীতির মঞ্চ ছাড়ছেন না তিনি।

বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে ভোটারদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ তুলেছেন ১২ বছরের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।

তার দাবি, তিনি ‘রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের বলি’ হয়েছেন।

চলতি সপ্তাহে চ্যানেল টোয়েন্টিকে একটি সাক্ষাৎকার দেন নেতানিয়াহু।

নতুন নেতৃত্বে দেশকে কেমন অবস্থায় তিনি দেখেন জানতে চাইলে রহস্যের সুরে কথা বলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘তারা ভালোদের মূলোৎপাটন করছে। আর খারাপ ও বিপজ্জনকদের ক্ষমতায় আনছে। এই জাতির ভাগ্য নিয়ে আমি শঙ্কিত।’

নেতানিয়াহুর এমন বক্তব্যে ইসরায়েলের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ দেখা দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রোববার নতুন সরকারের শপথ গ্রহণ ঠেকাতে নেতানিয়াহু আর তার সমর্থকরা কতোটা মরিয়া, তারই ইঙ্গিত মিলেছে সম্ভাব্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যে। তার হুমকি দেয়ার এ ভঙ্গি ইসরায়েলের গত এক দশকের রাজনীতিতে অপরিচিত কিছু নয়।

এর মধ্যে শুক্রবার পার্লামেন্ট নেসেটের বাইরে বিশাল বিক্ষোভ করেছেন নেতানিয়াহুর সমর্থকরা।

জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে প্রায় নিয়মিত ইসরায়েলকে রক্ষায় একমাত্র সক্ষম ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেন নেতানিয়াহু।

নিরপেক্ষ থিংক-ট্যাঙ্ক ইসরায়েল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ইয়েহানান প্লেজনার বলেন, ‘নেতানিয়াহুর শাসনামলে ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি যেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, ইসরায়েলে এর আগে এমনটি কখনো দেখা যায়নি।’

বরাবরই প্রতিদ্বন্দ্বীদের তাচ্ছিল্য করে এসেছেন নেতানিয়াহু। বিভাজন তৈরির মাধ্যমে জয়ের কৌশল তার।

ইহুদিদের মধ্যে যারা বিরোধী, তাদের দুর্বল ও আত্মবিদ্বেষী ‘বামপন্থি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি। আর আরবদের আখ্যায়িত করেন সন্ত্রাসীঘেঁষা বলে।

বিশ্লেষকদের মতে, এ কৌশলে ভালোই লাভবান হয়েছেন নেতানিয়াহু। ডানপন্থি লিকুদ পার্টিকে এভাবেই ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি।

ফিলিস্তিনিদের সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চাপকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন নেতানিয়াহু।

ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির বিরোধিতা করে ২০১৫ সালে খোদ আমেরিকান কংগ্রেসের অধিবেশনে দাঁড়িয়ে ঔদ্ধত্য দেখান তিনি।

সে সময় চুক্তি আটকাতে না পারলেও পরবর্তীতে ওবামার উত্তরসূরী আরেক সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে জেরুজালেমের জন্য ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করে ছেড়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। এমনটি চারটি আরব রাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠাও করেছেন।

ইরানের বিরুদ্ধে ছায়া যুদ্ধ উস্কে দিতে নেতানিয়াহু সফল হয়েছেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় তিনবারের যুদ্ধ বাদ দিলে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে কয়েক দশকের সংঘাতপ্রবণ সম্পর্কে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।

ইয়েহানান প্লেজনার বলেন, ‘নেতানিয়াহু ইসরায়েলের ক্ষমতায় আসার আগে ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংকট যে অবস্থায় ছিল, এখনও তাই আছে। উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন বা কূটনীতিতে সাফল্য কিছুই তেমনভাবে ঘটেনি। ভূমি দখলও আগের মতোই হচ্ছে।’

কিন্তু এখন নেতানিয়াহুর কিছু কৌশল বুমেরাং হয়ে তার ওপরই আঘাত হানার পথে। ইসরায়েলের দীর্ঘকালের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলেও, সাবেক ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তার সুসম্পর্কে কারণে ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টিতে গ্রহণযোগ্যতা বেশ হারিয়েছেন নেতানিয়াহু।

দুর্নীতির অভিযোগে নিজ দেশেও আগের মতো জনসমর্থন নেই তার। সংবাদমাধ্যম, বিচার বিভাগ, পুলিশ, মধ্যপন্থি, বামপন্থি, এমনকি এক সময়ের মিত্র কট্টর জাতীয়তাবাদীদেরও ক্ষেপিয়ে তুলেছেন নেতানিয়াহু।

২০০৯ সাল থেকে টানা প্রধানমন্ত্রী পদে আছেন নেতানিয়াহু। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্তও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। অথচ গত দুই বছরে ইসরায়েলে চারটি সাধারণ নির্বাচনেই সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও একটিতেও সরকার গঠনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি তার দল।

সবশেষ চলতি বছরের মার্চে সাধারণ নির্বাচনের পর জোট বেঁধেছে ইয়াশ আতিদ, ইয়ামিনা, আরবভিত্তিক রা’ম পার্টিসহ আটটি দল। মতাদর্শগত পার্থক্য সত্ত্বেও কেবল নেতানিয়াহুকে উৎখাতে এক হয়েছে দলগুলো।

সবশেষ ধাপ পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে জয় পেলেই ক্ষমতা নেবে নতুন সরকার।

তা না হলে পঞ্চম সাধারণ নির্বাচনের দিকে ধাবিত হবে ইসরায়েল।

এ বিভাগের আরো খবর