ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদ্য বিদায়ী প্রধান ইয়োসি কোহেন।
ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালানো থেকে শুরু করে দেশটির শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহ খুনের বিষয়ে ইসরায়েলের সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত দেন তিনি।
গত সপ্তাহে মোসাদপ্রধান হিসেবে অবসর নেয়া কোহেন চ্যানেল ১২ এর এক অনুষ্ঠানে ইসরায়েলি সাংবাদিক ইলানা দায়ানের মুখোমুখি হন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে ইসরায়েলের টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারটি সম্প্রচার করা হয়।
২০১৫ সালের শেষের দিকে মোসাদের প্রধান হিসেবে কোহেনকে নিয়োগ দেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
রোববার পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট নবগঠিত জোটের পক্ষে গেলে ওই দিনই ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে হবে নেতানিয়াহুকে।
বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, টানা ১২ বছর ইসরায়েলের ক্ষমতায় থাকা নেতানিয়াহুর শাসনের অবসান হতে যাচ্ছে। বলতে গেলে নেতানিয়াহুর ক্ষমতার শেষ মুহূর্তেই মুখ খুললেন তার গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান কোহেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে ইরানের ওয়্যারহাউজে হামলা চালায় ইসরায়েল। এর মাধ্যমে ইরানের হাজার হাজার নথি ইসরায়েলের হাতে পৌঁছায়।
ওই বছরই চুরি করা নথি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, নথিতে প্রমাণ হয়, ইরান গোপনে একসময় পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করেছিল।
ইরানের ওয়্যারহাউজে হামলার বিষয়ে সাক্ষাৎকারে কোহেন বলেন, ওই অভিযানের পরিকল্পনা করতে দুই বছর লেগে যায়। সব মিলিয়ে মোসাদের ২০ জন অ্যাজেন্ট পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করে। তাদের কেউই ইসরায়েলের নাগরিক ছিলেন না।
কোহেন বলেন, ‘ইসরায়েলের তেল আবিব শহরের এক কমান্ড সেন্টার থেকে ওই অভিযান প্রত্যক্ষ করি। ওয়্যারহাউজটি ভেঙে ঢোকেন অ্যাজেন্টরা। ভেতরে ৩০টির বেশি সিন্দুক ভাঙতে হয় তাদের। অভিযানের সরাসরি চিত্র যখন কমান্ড সেন্টার থেকে দেখছিলাম, তখন আমরা সবাই অনেক উত্তেজিত ছিলাম।’
তিনি বলেন, অভিযানে অংশ নেয়া সব অ্যাজেন্ট বেঁচে গিয়েছিলেন। তারা ভালোই আছেন। তবে ওই সময় তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ইরান থেকে সরাতে হয়েছিল।
ইরানের ওয়্যারহাউজ থেকে হাজার হাজার নথি চুরির ঘটনা প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছিল ইসরায়েল। তবে সাক্ষাৎকারে ইরানের বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযানেও ইসরায়েলের জড়িত থাকার ইঙ্গিত দেন কোহেন, যেগুলোর জন্য অনেকদিন ধরেই ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়ী করা হয়ে আসছে।
সাক্ষাৎকারের শুরুর দিকে ইরানের নাতাঞ্জ পরমাণু কেন্দ্র নিয়ে কথা বলেন কোহেন।
গত বছরের জুলাইয়ে নাতাঞ্জ পরমাণু কেন্দ্রে নাশকতা চালানো হয়। এতে কেন্দ্রটিতে আগুন ধরে যায়।
চলতি বছরের এপ্রিলেও ইরানের কর্মকর্তারা নাতাঞ্জে ফের নাশকতার অভিযোগ তুলেছিলেন। ওই নাশকতায় কেন্দ্রের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়।
নাতাঞ্জে ওই দুই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলকে দায়ী করে দেশটি ‘পরমাণু সন্ত্রাসবাদ’ চালাচ্ছে বলে উল্লেখ করে ইরান।
কোহেন সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক দায়ানকে বলেন, নাতাঞ্জ পরমাণু কেন্দ্র খুব ভালো করেই চেনেন তিনি। কেন্দ্রটির সেন্ট্রিফিউজ যেখানে রয়েছে, সেই ভূগর্ভস্থ কক্ষে চাইলে সাংবাদিক দায়ানকে নিয়ে যেতে পারবেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘নাতাঞ্জের ভূগর্ভস্থ কক্ষের নকশা এখন আগের মতো নেই, পরিবর্তন হয়েছে।’
গত বছরের নভেম্বরে ইরানের রাজধানী তেহরানের উপকণ্ঠে রাস্তায় খুন হন দেশটির শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহ। ওই ঘটনার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছিল ইরান।
সাক্ষাৎকারে ফাখরিজাদেহ হত্যায় ইসরায়েলের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলেননি কোহেন। তবে দেশটির সংশ্লিষ্টতাও অস্বীকার করেননি তিনি।
কোহেন বলেন, ওই বিজ্ঞানী দীর্ঘদিন ইসরায়েলের লক্ষ্য ছিলেন। তার বৈজ্ঞানিক জ্ঞান মোসাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের জনগণের জীবন ফাখরিজাদেহর কারণে যদি হুমকির মুখে পড়ে, তা হলে তার বেঁচে না থাকাই উচিত।
‘যদি ওই বিজ্ঞানী তার পেশা পরিবর্তন করতেন এবং কোনো ধরনের হুমকির কারণ না হতেন, তা হলে তাকে ছেড়ে দেয়া হতো।’