বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিজেপিতে বড় ভাঙন, তৃণমূলে পুত্রসহ মুকুল

  •    
  • ১১ জুন, ২০২১ ১৭:৩২

‘ভারতকে যিনি আগামী দিনে নেতৃত্ব দেবেন, তিনি আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফেরা নিয়ে বিস্তারিত আমি পরে জানাব। বিজেপি করতে পারব না। তাই ঘরে ফিরেছি।’

বিজেপি ছেড়ে আবার তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন মুকুল রায়। সঙ্গে এনেছেন তার পুত্র শুভ্রাংশু রায়কেও। শুক্রবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি তাদের উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানান।

এ সময় তৃণমূল ভবনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চ্যাটার্জি, সুব্রত বক্সী, ফিরহাদ হাকিমসহ অনেকে। একসময় মমতার পর মুকুল রায়কে তৃণমূলের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি গণ্য করা হতো।

তার ফিরে আসার প্রেক্ষাপটে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন ও এখানে এসে শান্তি পেল। বিজেপি করা যায় না।’

আর মুকুল রায় বলেন, ‘নিজের খুব ভালো লাগছে। পুরোনো ছেলেদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। বিজেপি থেকে বেরিয়ে এসে ভালো লাগছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতকে যিনি আগামী দিনে নেতৃত্ব দেবেন, তিনি আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফেরা নিয়ে বিস্তারিত আমি পরে জানাব। বিজেপি করতে পারব না। তাই ঘরে ফিরেছি।’

সাংবাদিকদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মুকুলের ওপর অনেক অত্যাচার হয়েছে। ও মুখে বলতে পারছিল না।’

মমতা ও মুকুল দুজনেই বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কখনও কোনো মতবিরোধ ছিল না।’

মমতা আরও বলেন, ‘যারা গাদ্দারি করে চলে গেছে দল ছেড়ে, তাদের আমরা দলে ফেরাব না।’

মুকুলের তৃণমূলে যোগ দেয়ার বিষয়ে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘একজন চলে গেলে দলের কিছু এসে যায় না। আমাদের দল নেতানির্ভর নয়।’

রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ধরাশায়ী হয়েছে। সরকার গঠন তো দূর অস্ত, ১০০ আসনের গণ্ডি পেরোতে পারেনি। এই প্রেক্ষাপটে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন অনেকে। তবে মুকুল রায়ের ক্ষেত্রে তেমনটা নয়। তিনি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তার সরাসরি যোগাযোগ। বলতে গেলে তার হাত ধরে তৃণমূল ছেড়ে একের পর এক নেতা মন্ত্রী বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।

রাজ্য বিজেপির উত্থানে মুকুল রায়ের অবদান অনস্বীকার্য কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে কোথায় যেন বেঁধে তাকে রেখে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব রাজ্য দাপিয়ে বেড়িয়েছে। মুকুল রায়কেও সেভাবে নির্বাচনে পাওয়া যায়নি। বিজেপির সঙ্গে মুকুলের দূরত্ব বাড়ছিলই।

কৃষ্ণনগর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রায় কোনো শব্দ খরচ করেননি মুকুল। আগে পরে কখনও তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে কোনো বাজে শব্দ ব্যবহার করেননি। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিভিন্ন সময়ে নরম মনোভাব দেখিয়েছেন মুকুল রায়ের প্রতি।

ভোটের প্রচারে গিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘মুকুল বেচারার জন্য কষ্ট হয়। কোথায় তাকে কৃষ্ণনগরে ফেলে রেখেছে।’ কিংবা ‘মুকুল অতটা খারাপ নয়।’ এসব মন্তব্য থেকে রাজ্যের রাজনীতিতে মুকুলের তৃণমূলে ফেরা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়।

বিধানসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে জিতে বিধায়ক হিসেবে শপথ নিতে গিয়ে তৃণমূলের সুব্রত বক্সীর সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলেন মুকুল রায়। বিজেপির বিষয়ে মুকুল কোনো আগ্রহ দেখাননি। তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরও এড়িয়ে গেছেন।

মুকুলের পুত্র শুভ্রাংশুও দলের বিরুদ্ধে গিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন। তিনি লেখেন, ‘একটি সদ্য নির্বাচিত সরকারকে আক্রমণ করার আগে আত্মসমালোচনা করা দরকার।’ তারা যে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতি পছন্দ করছেন না, সেটাও বুঝিয়ে দেন শুভ্রাংশু।

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি সম্প্রতি মুকুল রায়ের অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে হাসপাতালে যান। অথচ বিজেপির তরফে কোনো খোঁজখবর নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ। যদিও অভিষেকের হাসপাতালে শুভ্রাংশুর মাকে দেখতে যাওয়া নিয়ে তখন বলা হয়, এটা পারিবারিক সৌজন্যে।

নির্বাচনের পর মঙ্গলবার রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের সাংগঠনিক বৈঠকে পুত্রসহ মুকুলের অনুপস্থিতিতে তাদের তৃণমূলে যোগ দেয়ার আভাস আরও স্পষ্ট হয়। মুকুলের ঘনিষ্ঠরা মনে করেন, মুকুল বিজেপি থেকে তার প্রাপ্যটা পাননি।

১৯১৭ সাল থেকে বিজেপিতে ছিলেন মুকুল। বিজেপির ভেতরের অনেক আটঘাট তার জানা হয়ে গেছে । তাই পুত্রসহ মুকুলকে ফিরিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস দিল্লি জয়ের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

মুকুল রায়ের পুরোনো পদ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদে এখন অভিষেক ব্যানার্জি। সে ক্ষেত্রে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন মাথায় রেখে মুকুল রায়কে তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য করা হতে পারে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তার বিশাল যোগাযোগ কাজে লাগাতে চাইছে তৃণমূল।

এ বিভাগের আরো খবর