বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভারতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ বেড়েছে ১৫০ শতাংশ

  •    
  • ১১ জুন, ২০২১ ১৫:৪৫

ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের একমাত্র ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত ‘অ্যাম্ফোটারিসিন-বি’ ইনজেকশনের ব্যাপক ঘাটতি পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। রোগীর চিকিৎসায় পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ না থাকাও সংক্রমণ বাড়ার অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

মাত্র তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ভারতে প্রাণঘাতী মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস (কালো ছত্রাক) রোগের সংক্রমণ বেড়েছে ১৫০ শতাংশ।

ফলে এ পর্যন্ত ৩১ হাজার মানুষের দেহে শনাক্ত হয়েছে বিরল রোগটি। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ১০৯ জনের।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত কয়েক মাসে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত প্রায় সবাই কিছুদিন আগে করোনাভাইরাস থেকে সেরে উঠেছেন।

গত মাসেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস মহামারি পরিস্থিতি ঘোষণা করে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য।

আগেই করোনায় বিপর্যস্ত দেশটিতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়েছে ভারত সরকার।

বিশেষ করে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের একমাত্র ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত ‘অ্যাম্ফোটারিসিন-বি’ ইনজেকশনের ব্যাপক ঘাটতি পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।

রোগীর চিকিৎসায় পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ না থাকাও সংক্রমণ বাড়ার অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত রাজ্য মহারাষ্ট্রে এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৫৭ জন মিউকরমাইকোসিস হয়েছে। রাজ্যটিতে এ রোগে মৃত্যু হয়েছে ৬০৯ জনের।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণে এর পরই দ্বিতীয় শীর্ষে রয়েছে গুজরাট। রাজ্যটিতে ৫ হাজার ৪১৮ জনের এ রোগ হয়েছে, মারা গেছেন ৩২৩ জন।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণে তৃতীয় শীর্ষে রাজস্থান রাজ্য, আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৯৭৬ জন। আর এ রোগে মৃত্যুতে তৃতীয় শীর্ষ অবস্থান কর্ণাটকের, রাজ্যটিতে মারা গেছেন ১৮৮ জন।

অথচ তিন সপ্তাহ আগে, অর্থাৎ গত ২৫ মে মহারাষ্ট্রে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৭৭০ আর গুজরাটে ২ হাজার ৮৫৯ জন।

ভারতের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ রাজ্য উত্তর প্রদেশে ১ হাজার ৭৪৪ জন ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ১৪২ জন। ২৫ মে রাজ্যটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০১।

রাজধানী দিল্লিতে এ পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন জটিল রোগটিতে, মারা গেছে ১২৫ জন। তিন সপ্তাহ আগে রাজ্যটিতে সংক্রমণ ছিল মাত্র ১১৯।

এ ছাড়া ঝাড়খণ্ডে আক্রান্ত ৯৬ জন, পশ্চিমবঙ্গে ২৩ জন।

রোগটির ওষুধ ‘অ্যাম্ফোটারিসিন-বি’ ব্যয়বহুল বলে বিনামূল্যে সেটি রোগীদের দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। সরবরাহ চাহিদার তুলনায় ভীষণ অপর্যাপ্ত বলে রোগীর সংখ্যা অনুযায়ী মহারাষ্ট্রের জন্য সর্বাধিক বরাদ্দের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

শ্বাসতন্ত্র অথবা ত্বকের মাধ্যমে একবার এটি মানবদেহে প্রবেশ করলে এরপর এই ছত্রাক মুখমণ্ডলজুড়ে ছড়াতে শুরু করে। প্রথমে নাক, কপাল ও গালের পেছন আর দুই চোখের মাঝখানে অবস্থিত সাইনাস বা ‘এয়ার পকেট’, তারপর ত্বক, মস্তিষ্ক, ফুসফুস আর কিডনিতেও ছড়ায় এই ছত্রাক।

একেক করে সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হতে থাকে এর সংক্রমণে।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, ছত্রাক কোথায় ছড়াচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে এ রোগের উপসর্গ।

সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে সর্দি, নাক বন্ধ থাকা ও নাক থেকে রক্ত পড়া।

ধীরে ধীরে চোখ ফুলে ওঠে, চোখে তীব্র ব্যথা শুরু হয়, চোখের পাতা ঝুলে পড়ে। দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হতে হতে শেষ পর্যন্ত চলেই যায়।

অনেক সময় নাকের আশপাশের ত্বকে আর মুখের ভেতরের উপরিভাগে কালো দাগও দেখা যায়।

এ ছাড়াও এ রোগে মুখ ফুলে ওঠা, মাথাব্যথা, তলপেটে ব্যথা, বমিভাব ও বমি, পেটের ভেতরে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি হতে পারে।

বেশির ভাগ মানুষ এই ছত্রাকের সংস্পর্শে এলেও তাদের আক্রান্ত করতে পারে না এটি; বরং অত্যধিক দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিরল এ রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ।

ভারতে করোনা রোগীদের মধ্যে যাদের ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত কিংবা স্টেরয়েড প্রয়োগে শরীরের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে গেছে, হাসপাতাল বা আইসিইউতে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়েছেন কিংবা ছত্রাকের গুরুতর সংক্রমণের চিকিৎসা হিসেবে ভোরিকোনাজল থেরাপি নিয়েছেন, তারাই আক্রান্ত হচ্ছেন মিউকরমাইকোসিসে।

সাধারণ অবস্থাতেও ডায়াবেটিস, ক্যানসার, অঙ্গ প্রতিস্থাপন, কোষ প্রতিস্থাপন, রক্তে অতিরিক্ত আয়রন, ত্বকে পুড়ে যাওয়া বা কোনো আঘাত বা অস্ত্রোপচার থেকে সৃষ্ট ক্ষত ইত্যাদিতে ভুগছেন, এমন রোগীদের ক্ষেত্রে এ রোগের ঝুঁকি বেশি।

বিরল এ রোগটিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুহার ৫০ শতাংশের বেশি। যারা প্রাণে বেঁচে যান, তাদেরও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এক বা দুই চোখ, এমনকি চোয়ালও ফেলে দিয়ে বাঁচতে হয় বাকি জীবন।

এ বিভাগের আরো খবর