উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শিনজিয়াং প্রদেশে বসবাসরত উইঘুরসহ অন্যান্য মুসলমান সংখ্যালঘুর উপর চীন গুরুতর মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে বলে মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে শিনজিয়াং নিয়ে ১৬০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন হাজির করে অ্যামনেস্টি। সেখানে এই মন্তব্য করে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শিনজিয়াংয়ে উইঘুর, কাজাখসহ অন্যান্য মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপর গণ আটক, নজরদারি ও নির্যাতন চালাচ্ছে চীন। এসব বিষয় তদন্তে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানায় মানবাধিকার সংস্থাটি।
শিনজিয়াং প্রদেশে ‘বিভীষিকাময় পরিস্থিতি’ সৃষ্টির জন্য চীনা কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব আনিয়েস ক্যালামার্দ।
তিনি বলেন, ‘শিনজিয়াংয়ে বন্দি শিবিরে বিপুল সংখ্যক মানুষ মগজ ধোলাই, নির্যাতন ও অন্যান্য অবমাননাকর পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন। এ ছাড়া শিবিরের বাইরে লাখ লাখ মানুষ ব্যাপক নজরদারির মধ্যে রয়েছেন। এ নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ওখানকার বাসিন্দারা। এমন পরিস্থিতি মানবতার বিবেকে ধাক্কা দেয়া উচিত।’
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের বিরুদ্ধে ম্যান্ডেট অনুযায়ী কাজ করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ আনেন অ্যামনেস্টির মহাসচিব ক্যালামার্দ।
ক্যালামার্দ বিবিসিকে বলেন, ‘শিনজিয়াং পরিস্থিতির নিন্দা জানাননি গুতেরেস। আন্তর্জাতিক তদন্তেরও আহ্বান জানাননি তিনি।
‘মানবিক মূল্যবোধের সুরক্ষা নিশ্চিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘ। সে হিসেবে শিনজিয়াং নিয়ে কথা বলা সংস্থাটির মহাসচিবের দায়িত্ব। মানবতবিরোধী অপরাধের ঘটনায় চুপ করে থাকা তাকে মানায় না।’
শিনজিয়াং শিবিরের ৫৫ সাবেক বন্দির সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।
অ্যামনেস্টির পক্ষ থেকে বলা হয়, বন্দিশিবিরে আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতি পরিপন্থি কর্মকাণ্ড (নির্যাতন, নিপীড়ন, কারাবাস) সংঘটনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এর আগে এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনেও অ্যামনেস্টির মতো প্রায় একই বক্তব্য উঠে আসে। শিনজিয়াংয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য চীনের সরকারকে দায়ী করে সংস্থাটি।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনের লেখক জোনাথান লোয়েব বলেন, গণহত্যা অপরাধের সব প্রমাণ প্রতিবেদনে হাজির হয়নি। এটিতে কেবল ভয়াবহতার সামান্য অংশই প্রকাশ হয়েছে।
শিনজিয়াং প্রদেশে ২০১৭ সাল থেকে শুরু হওয়া লাখ লাখ উইঘুরসহ অন্যান্য মুসলমানদের শিবিরে আটকে রেখে চীন সরকারের নির্যাতন চালানোর বিষয়ে একমত বিশেষজ্ঞরা।
তবে এসব অভিযোগ বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছে চীন। দেশটির ভাষ্য, ঐচ্ছিক কারিগরী শিক্ষা দেয়া হয় শিবিরে। পাশাপাশি সেখানে সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে মৌলবাদ নির্মূলকরণ কর্মসূচিও পরিচালনা করা হয়।