করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনতে দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশকে ১০০ কোটি ডোজ টিকা বিনা মূল্যে দেবে বিশ্বের শীর্ষ সাত অর্থনীতির দেশ।
ফ্রান্স টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে বণ্টন করা হবে এই বিপুল পরিমাণ টিকা।
এই টিকা দেয়া হবে নিম্ন ও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোকে।
তবে ওই প্রতিবেদনে কোনো দেশের নাম উল্লেখ করা হয়নি। ফলে বাংলাদেশ এই টিকা পাচ্ছে কি না, সেটি নিশ্চিত করে বলা না গেলেও সম্ভাবনা রয়েছে এই কারণে যে, বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের তালিকাতেই পড়ে।
এই টিকার ৮০ শতাংশ দেয়া হবে বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা বিতরণে গড়ে ওঠা জোট কোভ্যাক্সের মাধ্যমে। আর কোভ্যাক্স বাংলাদেশকে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ হারে ৬ কোটি ৭০ লাখ টিকা দেবে বলে অঙ্গীকার করেছে। পরে জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ টিকা দেয়ার কথাও জানানো হয়।
এই টিকা পাওয়ার কথা ছিল ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে। তবে সে দেশে করোনা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি আর যুক্তরাষ্ট্র কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ করায় টিকা উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটেছে সিরামে। এ কারণে তারা টিকা দিতে পারছে না। ফলে বাংলাদেশ সেখান থেকে কেনা টিকার পাশাপাশি কোভ্যাক্স থেকেও প্রত্যাশিত টিকা পায়নি।
এর মধ্যে জি সেভেনের এই ঘোষণা স্বল্প আয়ের দেশগুলোর জন্য স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে।
বিশ্বজুড়ে করোনার টিকাদান কর্মসূচির গতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে জি-সেভেন জোটের নেতারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার জানান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
জি-সেভেন জোটের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ইংল্যান্ডে পৌঁছাতে শুরু করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা। শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনের এ সম্মেলন।
বরিস জনসন জানান, ১০০ কোটির কমপক্ষে ১০ কোটি ডোজ আগামী বছরের মধ্যে দান করবে যুক্তরাজ্য। এর মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ বণ্টন করা হবে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই।
ছোঁয়াচে ভাইরাসের গতিবৃদ্ধি রোধে বিশ্বের অনুন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে টিকা পাঠাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ধনী দেশগুলোর প্রতি বেশ কিছুদিন ধরেই আহ্বান জানিয়ে আসছিল জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা।
প্রয়োজনের কয়েক গুণ ডোজ মজুত করায় টিকা অপচয়ের অভিযোগ উঠেছে ধনী দেশগুলোর বিরুদ্ধে। বিপরীতে এখন পর্যন্ত এক ডোজও টিকা পায়নি দরিদ্র অনেক দেশ।
৪০ কোটি ডোজ কেনার চুক্তি করে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে যুক্তরাজ্য। বিপুল টিকা মজুতের ফলে দরিদ্র দেশগুলোতে পর্যাপ্ত টিকার সরবরাহ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এমন অবস্থায় জি-সেভেন জোটের শীর্ষ সম্মেলন সামনে রেখে জনসন বলেন, ‘শিগগিরই পরিস্থিতি বদলাবে। যুক্তরাজ্যে টিকা কার্যক্রম সফল হওয়ায় এখন আমরা উদ্বৃত্ত টিকা দান করার মতো অবস্থানে এসেছি। এর মাধ্যমে মহামারি মোকাবিলায় বড় একটি পদক্ষেপ নেব আমরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আশা করছি, জি-সেভেন সম্মেলনে অন্য নেতারাও একই রকম বার্তা দেবেন। সারা বিশ্বকে টিকার আওতায় আনতে এবং করোনাভাইরাসকে প্রতিহত করতে একসঙ্গে কাজ করব আমরা।’
ডাউনিং স্ট্রিট জানিয়েছে, আসছে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ ও চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই আরও আড়াই কোটি ডোজ দেবে ব্রিটিশ সরকার।
এর আগে দরিদ্র, স্বল্প ও মধ্য আয়ের ৯২টি দেশে ৫০ কোটি ডোজ অনুদান হিসেবে পাঠানোর ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
২০২১ সাল শেষ হওয়ার আগেই বিশ্বজুড়ে কমপক্ষে ১০ কোটি ডোজ টিকা বিনা মূল্যে বণ্টনের ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও।
এর মধ্যে ৩ কোটি করে মোট ৬ কোটি ডোজ দেবে ফ্রান্স ও জার্মানি।