বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাসমতী চাল নিয়ে নতুন যুদ্ধে ভারত-পাকিস্তান

  •    
  • ৯ জুন, ২০২১ ১৯:৫৯

ভারত তার আবেদনে নিজেকে বাসমতী চালের একমাত্র উৎপাদক হিসেবে দাবি করেনি। তবে পিজিআই স্ট্যাটাস পেলে এই স্বীকৃতিও পাবে দেশটি। চালটির পাকিস্তানের উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের আশঙ্কা, এর ফলে বিশ্ববাজারে বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা।

বাসমতী চালের তৈরি বিরিয়ানি ও পোলাওয়ের ঐতিহ্য রয়েছে ভারত-পাকিস্তানের দুই দেশেরই। লম্বা চিকন এই চালটি এখন দুই বৈরী দেশের ঝগড়ার নতুন কারণেও পরিণত হয়েছে।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, সম্প্রতি হিমালয়ের পাদদেশে চাষ হওয়া চালটির ভৌগোলিক মেধাস্বত্ব দাবি করে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) একটি বিশেষ ট্রেডমার্কের আবেদন করেছে ভারত।

চালটির পাকিস্তানের উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের আশঙ্কা, এর ফলে বিশ্ববাজারে বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা।

পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর দক্ষিণ লাহোরের একটি চালকলের মালিক গোলাম মুর্তজা বলেন, ‘এটা অনেকটা আমাদের ওপর আণবিক বোমা মারার ঘটনার মতো।’

ইইউতে ভারত বাসমতী চালের ভৌগোলিক মেধাস্বত্বের (পিজিআই) জন্য আবেদন করার পরই এর বিরোধিতা করেছে পাকিস্তান।

বিশ্বে চাল রপ্তানিতে ভারতের অবস্থান প্রথম। দেশটি চাল রপ্তানি করে বছরে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার আয় করে। অন্যদিকে জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, চাল রপ্তানিতে বিশ্বে পাকিস্তানের অবস্থান চতুর্থ; এ থেকে দেশটির বার্ষিক আয় প্রায় ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।

এই দুটি দেশই বাসমতী চালের একমাত্র রপ্তানিকারক।

গোলাম মুর্তজা বলেন, ‘যেভাবেই হোক আমাদের বাজার দখলের জন্য ভারত এই ঝামেলাটা পাকিয়েছে। আমাদের পুরো চালশিল্পে এর প্রভাব পড়ছে।’

পাকিস্তানের একটি চাতালে বাসমতী চালের ধান শুকানোর কাজ করছেন দুই শ্রমিক। ছবি: এএফপি

করাচি থেকে কলকাতা পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার অনেক জায়গাতেই বাসমতী চাল প্রধান খাবার। ঝাল দিয়ে রান্না করা মাংস ও সবজির সঙ্গে এটি খাওয়া হয়। এ ছাড়া বিয়েসহ গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে বাসমতী চালের তৈরি বিরিয়ানি একটি অপরিহার্য খাবার।

গত ৫০ বছরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তিনটি যুদ্ধ হয়েছে। সর্বশেষ সংঘাতটি হয়েছে ২০১৯ সালে।

গত কয়েক দশকে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দুই দেশই পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছে।

যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ বাসমতী চাল

ইউরোপের কীটনাশকবিরোধী কঠিন নীতির কারণে ভারত থেকে বাসমতী চালের রপ্তানি কমেছে। এ সুযোগে গত তিন বছরে ইইউতে চালটির রপ্তানি বাড়িয়েছে পাকিস্তান।

ইউরোপীয় কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ওই অঞ্চলের বার্ষিক প্রায় তিন লাখ টন চালের চাহিদার দুই-তৃতীয়াংশই মেটায় পাকিস্তান।

পাকিস্তান রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মালিক ফয়সাল জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমাদের জন্য ইউরোপের এই বাজার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি দাবি করেন, পাকিস্তানের চাল তেমন কোনো কীটনাশক ছাড়াই জৈব চাষ পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হয়। এটি মানেও ভালো।

কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলের পণ্যের জন্য মেধাস্বত্বের স্বীকৃতি দেয় প্রটেকটেড গ্র্যান্ট ইন্ডিকিশেন (পিজিআই)। এ জন্য পণ্যটির উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও প্রস্তুতি- এই তিনটির যেকোনো একটি ধাপ ভৌগোলিক অঞ্চলটিতে সম্পন্ন হতে হবে।

পিজিআই স্বীকৃতি পাওয়া জনপ্রিয় পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারতের দার্জিলিং চা, কলম্বিয়ার কফি এবং শূকরের মাংসে তৈরি ফ্রান্সের খাবার হ্যাম।

পিজিআই কোনো পণ্যের ভৌগোলিক উৎসের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।

প্রটেকটেড ডেজিগনেশন অফ অরিজিন (পিডিও) হলো কোনো পণ্যের ভৌগোলিক উৎস-সম্পর্কিত স্বীকৃতি। এর জন্য ওই পণ্যটির উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও প্রস্তুতির তিনটি ধাপই একই অঞ্চলে সম্পন্ন হতে হবে।

পিডিও স্বীকৃতি পাওয়া জনপ্রিয় পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্রান্সের ব্রাই চিজ ও ইতালির গরগনজোলা চিজ।

এ ধরনের পণ্যের নকল ও অপব্যবহার ঠেকাতে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যা বিভিন্ন দেশ সুরক্ষা চুক্তির আওতায় মেনে চলে। পণ্যের ওপরে মান নির্দেশক চিহ্ন থাকায় বেশি দামে বিক্রিও হয়।

ভারত তার আবেদনে নিজেকে বাসমতী চালের একমাত্র উৎপাদক হিসেবে দাবি করেনি। তবে পিজিআই স্ট্যাটাস পেলে এই স্বীকৃতিও পাবে দেশটি।

ইন্ডিয়ান রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিজয় সেতিয়া এএফপিকে বলেন, ‘প্রায় ৪০ বছর ধরে ভারত ও পাকিস্তান সম্মানজনক উপায়ে আলাদা বাজারে রপ্তানি ও প্রতিযোগিতা করে আসছে। আমার মনে হয় না পিজিআই স্বীকৃতি পেলে এই পরিস্থিতি বদলে যাবে।’

ঐতিহ্যের যৌথতাই সমাধান

ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক মুখপাত্র এএফপিকে জানিয়েছেন, ইইউর নিয়ম অনুযায়ী আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে একটি বন্ধুত্বসুলভ সমঝোতায় আসতে হবে দুই দেশকে। তবে এর জন্য আরও তিন মাস সময় চাইছে ভারত।

আইন গবেষক ডেলফাইন মারি ভিভিয়েনের বলেন, ‘এক দেশ ভাগ হয়েই ভারত-পাকিস্তান দুটি দেশ হয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে বাসমতী চালের খ্যাতি ও ভৌগোলিক অঞ্চল দুই দেশের জন্যই এক।’

কয়েক বছরের গড়িমসির পর এ বছরের জানুয়ারিতে দেশের কোথায় বাসমতী চাল চাষ করা যাবে, সেটি ঠিক করে দিয়েছে পাকিস্তান সরকার। হিমালয়ের গোলাপি লবণসহ গর্ব করার মতো অন্যান্য কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেও একই ধরনের সুরক্ষামূলক স্বীকৃতি দেয়ার উদ্যোগের কথা জানিয়েছে দেশটি।

চাল রপ্তানিকারক ফয়সাল জাহাঙ্গীর জানান, ইইউর কাছে আবেদনের বদলে বাসমতী চালের যৌথ ঐতিহ্যের বিষয়ে ভারতকে বোঝানোর চেষ্টা করবে পাকিস্তান।তিনি বলেন, ‘খুব শিগগির কোনো একটা সমাধানে আসার বিষয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী। কারণ হলো, পুরো বিশ্ব জানে বাসমতী চাল ভারত-পাকিস্তান দুটি দেশেই হয়। এর অনেক প্রমাণও রয়েছে।’

দুটি দেশ কোনো সমঝোতায় আসতে ব্যর্থ হলে বা ইইউর আইন ভারতের পক্ষে গেলে ইউরোপের আদালতে আপিল করতে পারবে পাকিস্তান। কিন্তু এর জন্য দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হবে দেশটিকে। এ সময়ে থমকে যেতে পারে পাকিস্তানের চালশিল্প।

এ বিভাগের আরো খবর