দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেম থেকে গ্রেপ্তার আল জাজিরার সাংবাদিক গিভারা বুদেইরিকে ছেড়ে দিয়েছে ইসরায়েলের পুলিশ। এর আগে কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখা হয় তাকে।
পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জারাহ এলাকায় দায়িত্ব পালনের সময় আটক করা হয় বুদেইরিকে। ফিলিস্তিনিদের চলমান বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করছিলেন তিনি।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, শনিবার বুদেইরিকে আটকের আগে লাঞ্ছিত করে পুলিশ। তার সহকর্মী আল জাজিরার ক্যামেরাপারসন নাবিল মাজাউইয়ের সঙ্গে থাকা ক্যামেরা ও অন্যান্য সরঞ্জাম ভেঙেও দেয় তারা।
বুদেইরিকে গ্রেপ্তার দেখানো হলে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাবিষয়ক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা।
মুক্তি পাওয়ার পর বুদেইরি বলেন, ‘চারদিক থেকে আমাকে হঠাৎ ঘিরে ধরেছিল পুলিশ সদস্যরা। আমি জানি না কেন। তারা আমাকে লাথি মারতে মারতে দেয়ালে কোণঠাসা করে ফেলে। এরপর মারতে মারতে গাড়ির ভেতরে ঢোকায়। যে যেখান থেকে পারছিল, আমাকে লাথি মারছিল।’
ঘটনার সময় ফিলিস্তিনের ৫৪তম নাকসা দিবসের কর্মসূচি চলছিল। পূর্ব জেরুজালেম, পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের লক্ষ্যে ইসরায়েলের চালানো আগ্রাসনের বিরোধিতায় পালিত হয় দিনটি।
১৯৬৭ সাল থেকে প্রতিবছর ৫ জুন ‘নাকসা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন গৃহহীন ও অবরুদ্ধ হাজারো ফিলিস্তিনি। নাকসার অর্থ ‘পিছিয়ে যাওয়া’।
দিবসটি পালনে অবস্থান ধর্মঘটে বসেছিলেন শেখ জারার ফিলিস্তিনিরাও। কারণ সেখান থেকেও তাদের উচ্ছেদের চেষ্টা করছে ইসরায়েলি বসতিস্থাপনকারীরা। এ নিয়ে করা মামলার রায় হওয়ার কথা থাকলেও বারবার তারিখ পিছিয়ে দিচ্ছে ইসরায়েলের আদালত।
২০০০ সাল থেকে আল জাজিরায় কাজ করছেন গিভারা বুদেইরি। আটক হওয়ার সময় সংবাদকর্মী হিসেবে সহজে শনাক্তে ‘প্রেস’ লেখা জ্যাকেট পরে ছিলেন তিনি। কাজের অনুমতিপত্র হিসেবে ইসরায়েলি প্রশাসনের দেয়া গভর্নমেন্ট প্রেস অফিস (জিপিও) কার্ডও ছিল তার কাছে।
বুদেইরি জানান, পরিচয় স্পষ্ট বোঝা যাওয়ার পরও তার সঙ্গে পুলিশ এমন আচরণ করেছে যেন তিনি কোনো অপরাধী। তিনি ইসরায়েলি এক নারী সেনাকে লাথি মেরেছেন অভিযোগে পুলিশ তাকে আটক করে।
অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন বুদেইরি।
১৫ দিন শেখ জারা এলাকার বাইরে না যাওয়ার শর্তে ছাড়া হয়েছে বুদেইরিকে।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন আল জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. মোস্তফা সওয়াগ।
তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী আমাদের সংবাদকর্মীদের আক্রমণ করা হচ্ছে। এটা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি। গিভারা বুদেইরি ও নাবিল মাজাউইয়ের সঙ্গে ইসরায়েলি দখলদাররা যে আচরণ করেছে, তা একজন সাংবাদিকের মৌলিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন।’
ড. সওয়াগ আরও বলেন, ‘গাজা উপত্যকা ও জেরুজালেমে কর্মরত সাংবাদিকদের ভয় দেখিয়ে কাজ বন্ধের চেষ্টা করা ইসরায়েলি প্রশাসনের নিয়মিত আচরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
আন্তর্জাতিক প্রেস ইনস্টিটিউটের বারবারা ত্রিওনফি বলেন, ‘এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গত কয়েক সপ্তাহ ও মাসে দায়িত্ব পালনকালে অনেক সাংবাদিকের ওপর ইসরায়েলি সেনাদের চড়াও হতে দেখেছি আমরা। দিন দিন এটি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।’
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের মুখপাত্র সাবরিনা বেনোইউ বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার স্পষ্ট লঙ্ঘন এসব ঘটনা। ইসরায়েলি প্রশাসন স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে তারা সংবাদ সংগ্রহ করতে দেবে না সাংবাদিকদের। এসব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
গত কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েলি পুলিশ কমপক্ষে ১৪ ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে আটক ও গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাবিষয়ক বৈশ্বিক সূচকে ২০২১ সালে ১৮০টি দেশের মধ্যে ইসরায়েলের অবস্থান ৮৬তম।