মিয়ানমারের চলমান সংকট নিরসনে আঞ্চলিক কূটনৈতিক তৎপরতায় আস্থা নেই বলে মন্তব্য করেছে দেশটির ছায়া সরকার।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশ নিয়ে গঠিত জোট (আসিয়ান) মিয়ানমারের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা সমাধানে সম্প্রতি উদ্যোগ নেয়। দেশটির সামরিক জান্তা সরকারের সঙ্গে রাজধানী নেপিডোতে শুক্রবার বৈঠকেও বসেন আসিয়ানের দুই নেতা।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার মিয়ানমারের ছায়া সরকার ওই মন্তব্য করে বলে আল-জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
মিয়ানমারের ছায়া সরকারের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মো জাউ উ বলেন, ‘আসিয়ানের প্রচেষ্টায় আমাদের আস্থা তেমন একটা নেই। আমাদের সব বিশ্বাস উঠে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের চলমান চার মাসের সংকট নিরসনে আসিয়ানের কোনো দৃঢ় পরিকল্পনা নেই।’
শুক্রবার সকালে আসিয়ানের মহাসচিব লিম জক হই ও আরেক নেতা ইরিওয়ান ইউসুফ মিয়ানমারের সামরিক নেতা মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে দেখা করেন।
মিয়ানমারের সেনা-সমর্থিত সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈঠকে মানবিক বিষয়ে সহযোগিতা, দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ার পর নির্বাচনের ব্যবস্থা, গত বছরের জাতীয় নির্বাচনে কারচুপিসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হয়।
১৯৬২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মিয়ানমার শাসন করা দেশটির সেনাবাহিনী আগামী দুই বছরের মধ্যে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার বিষয়ে অঙ্গীকারের কথা বিভিন্ন সময় জানিয়ে আসছে।
ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় চলতি বছরের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হয় আসিয়ানের সম্মেলন। সম্মেলনে অংশ নেয়ার ডাক পেতে আসিয়ানভুক্ত দেশের নেতাদের কাছে আবেদন জানিয়েছিল মিয়ানমারের ছায়া সরকার। সেই সঙ্গে ১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা দখল করা সামরিক সরকারকে স্বীকৃতি না দেয়ারও আহ্বান জানায় তারা।
পরে অবশ্য ওই সম্মেলনে মিয়ানমারের ছায়া সরকারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে জাকার্তায় দেশটির সামরিক নেতা মিন অং হ্লাইং উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে কয়েকটি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছান মিন অং হ্লাইংসহ আসিয়ানভুক্ত রাষ্ট্রের নেতারা। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার রাতে নেপিডো সফরে যান আসিয়ানের দুই নেতা।
গত বছরের নভেম্বরে জাতীয় নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় পায় সু চির নেতৃত্বাধীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। তবে ওই সময়ই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
এরই জেরে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চিকে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা থেকে হটায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত সু চিসহ সাড়ে চার হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির জান্তা সরকার।
স্থানীয় তদারকি সংস্থা অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্সের (এএপিপি) তথ্য অনুয়ায়ী, সেনাশাসনের অবসান, সু চিসহ অন্য নেতাদের মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নেয়া হাজার হাজার মিয়ানমারবাসীর মধ্যে প্রায় সাড়ে আট শ ব্যক্তি এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছে।সামরিক সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটানোর লক্ষ্যে এপ্রিলের মাঝামাঝি ‘জাতীয় ঐক্য সরকার’ (এনইউজি) নামে ছায়া সরকার গঠন করে সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) উৎখাত হওয়া নেতা, জাতিগত সংখ্যালঘু রাজনীতিকসহ মিয়ানমারের আন্দোলনরত গণতন্ত্রপন্থি নেতারা।