পূর্ব ইউরোপের দেশ বেলারুশে আদালতের ভেতরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বিচারাধীন এক রাজনৈতিক বন্দি। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গলায় ছুরি চালিয়েছেন তিনি।
রাজধানী মিনস্কের একটি আদালতে মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে।
ওই ব্যক্তির নাম স্তেফান লাতিপোভ। মঙ্গলবার ছিল তার নামে করা মামলার প্রথম শুনানির দিন।
স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষক সংস্থা ভিয়াসনা জানিয়েছে, কারাগারে বন্দি অবস্থায় প্রচণ্ড চাপ সহ্য না করতে পেরে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফ্রান্স টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের বিরোধী মত দমন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে গত বছর থেকে বেলারুশে গ্রেপ্তার আছেন কয়েক হাজার কর্মী ও বিক্ষোভকারী। আনুষ্ঠানিক বিচার চলছে তাদের অনেকের বিরুদ্ধে।
এদেরই একজন ৪১ বছর বয়সী লাতিপোভ। গত সেপ্টেম্বর মাসে গ্রেপ্তার হওয়া এই কর্মীর বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা রয়েছে।
ভিয়াসনা জানিয়েছে, দেহে অসংখ্য দাগ নিয়ে আদালতে হাজির হন লাতিপোভ। তার বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় একটি বেঞ্চে দাঁড়িয়ে ছুুরি দিয়ে নিজের গলায় আঘাত করেন তিনি।
ছুরিটিকে কলম ভেবে ভুল করেছিলেন উপস্থিত নিরাপত্তাকর্মী ও অন্যরা।
লাতিপোভের মুখ নীল হয়ে গেলে পড়ে যান তিনি। এরপর অচেতন অবস্থায় তাকে আদালত থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
বেলারুশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, লাতিপোভের জ্ঞান ফিরেছে। তার অবস্থা স্থিতিশীল। তিনি বিপদমুক্ত।
ভিয়াসনা বলছে, রাজনৈতিক বন্দি ঘোষণার পর থেকে নানাভাবে চাপ দেয়া হচ্ছে বলে লাতিপোভ তার বাবাকে জানিয়েছিলেন।
বেলারুশের বিরোধীদলীয় প্রখ্যাত নেতা আন্দ্রেই সানিকোভ বলেন, ‘এ ঘটনা প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সরকারের নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে ক্ষোভের আরেকটি বহিঃপ্রকাশ। আর কোনো উপায় না পেয়ে মরিয়া হয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন লাতিপোভ।’
গত বছরের আগস্টে বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে টানা ষষ্ঠ মেয়াদে জয় দাবি করেন লুকাশেঙ্কো। এরপর কয়েক মাস সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তপ্ত ছিল বেলারুশ।
সে সময় বিক্ষোভকারীদের ওপর কঠোর দমন-পীড়ন চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। সহিংসতায় প্রাণ হারান অনেকে। আটক করা হয় কয়েক হাজার ব্যক্তিকে। বিরোধীদলীয় নেতাদের কয়েকজনকে পাঠানো হয় নির্বাসনে।
গত মাসে বেলারুশের পূর্বাঞ্চলে একটি কারাগারে বন্দি অবস্থায় মৃত্যু হয় ভিতোল্দ আশুরক নামের এক রাজনৈতিক কর্মীর। প্রশাসনের দাবি, হৃদরোগে মারা গেছেন তিনি।
গত ২৩ মে বিরোধী মতের এক সাংবাদিক ও অধিকারকর্মীকে আটক করতে বেলারুশ সরকারের বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে তোপের মুখে পড়ে লুকাশেঙ্কো প্রশাসন।
গ্রিসের এথেন্স থেকে লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে যাচ্ছিল আইরিশ বিমান সংস্থা রায়ানএয়ারের বিমানটি। পথে খোদ প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোর নির্দেশে জোর করে বিমানটির পতিপথ বদলে মিনস্কে অবতরণ করতে বাধ্য করা হয়।
ওই ঘটনার পর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বেসামরিক বিমান নিরাপত্তা সংস্থা ইএএসএর নির্দেশে বেলারুশের আকাশসীমা পরিহার করে চলছে ইউরোপের প্রায় সব বিমান সংস্থা।