অস্বাভাবিক নিম্নমুখী জন্মহার থেকে মুক্তির পথ হিসেবে এবার ‘তিন সন্তান নীতি’ কার্যকর করল চীন।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের নেতৃত্বে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিট ব্যুরোর বৈঠকে আসে এ সিদ্ধান্ত।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবারের এ ঘোষণার ফলে এখন থেকে চীনে যেকোনো বিবাহিত দম্পতি সর্বোচ্চ তিন সন্তান নিতে পারবে।
শি চিনপিং প্রশাসনের নীতিমালায় অন্যতম বড় পরিবর্তন এটি। ২০১৬ সালে এক সন্তান নীতি বাতিল করে দুই সন্তান নীতি গ্রহণ করে তার সরকার।
জনসংখ্যা বিস্ফোরণের কারণে প্রায় চার দশক এক সন্তান নীতি কার্যকর থাকার পরও বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীন।
১৪০ কোটি মানুষের দেশটিতে এ নীতির কঠোর প্রয়োগের ফলে জন্মহার অস্বাভাবিকভাবে কমে আসে।
আবার এক সন্তান নীতি কার্যকর থাকাকালীন কন্যাসন্তান হলে ছেলের জন্য দ্বিতীয় সন্তান গ্রহণে কিছু ছাড় ছিল চীনে। সব মিলিয়ে দেশটির জনসংখ্যায় নারী-পুরুষ অনুপাতে বড় ব্যবধান তৈরি হয়েছিল।
এর পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ বছর আগে সে নীতি বদলে পরিবারপ্রতি সন্তানের সংখ্যা বাড়িয়ে দুই করে চীনা সরকার। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।
বড় বড় শহরে সন্তান লালন-পালন ব্যয়বহুল বলে একের বেশি সন্তান নিতে আগ্রহী হননি বেশিরভাগ দম্পতি।
এমন পরিস্থিতিতে নীতিমালা আরও শিথিল করে তিন সন্তান নেয়ার অনুমতি দেয়া হলো বলে জানিয়েছে সিনহুয়া। একই সঙ্গে জন্মহার স্বাভাবিক করতে দম্পতিদের অধিক সন্তান নিতে উৎসাহী করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেবে বেইজিং।
ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে থাকবে দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি ও প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে মানবসম্পদ পরিণত করার কৌশল নির্ধারণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ। এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানানো না হলেও এ লক্ষ্যে অবসর গ্রহণের সময়সীমা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
চীনের সামাজিক মাধ্যমে নতুন এ নীতি নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকেই। তারা বলছেন, এক বা দুই সন্তানের ভরণপোষণেরও সামর্থ্য নেই অনেকের।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোর এক ব্যবহারকারী লিখেন, ‘আমাকে (চীনা মুদ্রায়) ৫০ লাখ ইউয়ান (৭ লাখ ৮৫ হাজার ৬৫০ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ) দিলে আমি তিন সন্তান নেব।’
চলতি মাসে চীনের সবশেষ আদমশুমারিতে জানা যায়, ১৯৫০ সালের পর গত এক দশকে সবচেয়ে ধীর গতিতে জনসংখ্যা বেড়েছে দেশটিতে।
জাপান ও ইতালির মতো চীনেও মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির ফলে বেড়েছে বিপুল প্রবীণ জনগোষ্ঠী। দেশটিতে ২০২০ সালে নারীপ্রতি সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা ছিল মাত্র ১ দশমিক ৩।