করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কার বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার লড়াইয়ে হিমশিম খাচ্ছে ভারত। এর মধ্যেই তৃতীয় ধাক্কায় বিপুল প্রাণহানি এড়াতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বিভিন্ন রাজ্য।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারির এ পর্যায়ে আসন্ন তৃতীয় ধাক্কায় শিশু-কিশোরদের বড় অংশ করোনায় আক্রান্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন ভারতের অনেক স্বাস্থ্যবিদ।
এমন পরিস্থিতিতে রাজ্যে রাজ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে শিশুদের জন্য আলাদা শয্যার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
এছাড়া হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখতে এবং নমুনা পরীক্ষা বাড়াতেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রথমবার করোনাভাইরাস মহামারির বড় ধাক্কা লাগে ভারতে। নভেম্বর থেকে ভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমশ নিম্নমুখী ছিল চলতি বছরের মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এরপরই আবার ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে সংক্রমণ।
মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কায় একরকম মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় ভারত।
এপ্রিলজুড়ে দেশটিতে ৬৬ লাখের বেশি মানুষের দেহে করোনা শনাক্ত হয়, যা মার্চেও ছিল মাত্র সোয়া ১০ লাখ। আর চলতি মে মাসের ২৭ দিনে এ সংখ্যা রেকর্ড ৮৪ লাখ।
এ মাসে রেকর্ড ১ লাখ ৭ হাজার মৃত্যু দেখেছে ভারতবাসী। এপ্রিলে এ সংখ্যা ছিল অর্ধেকেরও কম, ৪৫ হাজার। আর তার আগের মার্চ মাসে এ সংখ্যা ছিল মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারতে মহামারির চলমান দ্বিতীয় ধাক্কার শিকার প্রায় ১০ শতাংশ রোগীই ২ থেকে ১৮ বছর বয়সী। দিন দিন এ হার বাড়ছে।
এ অবস্থায় উত্তর প্রদেশে ১২ বছরের কমবয়সী সন্তান আছে- এমন মা-বাবাদের টিকার আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছে রাজ্য সরকার।
গোয়ায় টিকা কার্যক্রমে অগ্রাধিকার দেয়া হবে দুই বছরের কমবয়সী শিশুদের মায়েদের, যারা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন।
পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ, তামিলনাড়ু, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, মধ্য প্রদেশ, হরিয়ানা, গোয়া ও ছত্তিশগড়ে সব হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য আলাদা শয্যার ব্যবস্থা ও ওয়ার্ড তৈরি করা হচ্ছে।
মহারাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোতে করোনায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য বেডের সংখ্যা ৬০০ থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার ৩০০ করা হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু মুম্বাইতেই যোগ হবে ৫০০ বেড।
শিশুদের চিকিৎসায় সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ও কাঠামো প্রণয়ন করছে পশ্চিমবঙ্গ ও তামিলনাড়ু।
মহারাষ্ট্র, দিল্লি, উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খণ্ড, গোয়া ও হিমাচল প্রদেশে শিশু বিশেষজ্ঞদের নিয়ে টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে।
বেশিরভাগ রাজ্যে শিশুদের করোনা ওয়ার্ডে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিআইসিইউ), নিওন্যাটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (এনআইসিইউ) ও সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিটের জন্য (এসআইসিইউ) আলাদা বেডের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এছাড়া মহামারির তৃতীয় ধাক্কা দ্রুত কাটিয়ে ওঠার সমন্বিত প্রস্তুতির অংশ হিসেবে অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র ও উত্তর প্রদেশ।
প্রায় দেড় বছরে সারা বিশ্বে প্রায় ১৭ কোটি মানুষের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে; মারা গেছে সোয়া ৩৫ লাখের বেশি।
শুধু ভারতেই করোনা শনাক্ত হয়েছে পৌনে তিন কোটির বেশি মানুষের দেহে; প্রাণহানি ৩ লাখ ১৯ হাজার।
করোনায় প্রাণহানিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পর তৃতীয় এবং শনাক্তের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ ভারত।
মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কায় বিপর্যস্ত দেশটিতে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার, হাসপাতালের ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ রোগীর কারণে বেডের তীব্র সংকট, চিকিৎসা পেয়েই অসংখ্য রোগীর মৃত্যুর খবর বারবার উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে।
এছাড়া করোনার টেস্ট কিট, ওষুধসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং রোগীর বিপরীতে স্বাস্থ্য খাতে লোকবল সংকটও প্রকট।
চলতি সপ্তাহে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছুটা কমে এলেও প্রতি দিনই দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। এ অবস্থায় শ্মশান, কবরস্থানগুলোতেও স্বজনদের মরদেহ নিয়ে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে অসংখ্য মানুষকে।
মহামারির এই দ্বিতীয় ধাক্কা অব্যাহত থাকার মধ্যেই জোরালো হচ্ছে তৃতীয় ধাক্কার শঙ্কা।