পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে অভ্যুত্থানে আটক হওয়ার তিন দিন পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে মুক্তি দিয়েছে সেনাবাহিনী।
মালি সরকার ও জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
সংঘাতকবলিত মালিতে ৯ মাসের মধ্যে দ্বিতীয় সেনা অভ্যুত্থানে সোমবার আটক হন প্রেসিডেন্ট বাহ দাও ও প্রধানমন্ত্রী মুকতার উয়ানে। বামাকোর কাছে কাতি সেনা ঘাঁটিতে তাদের আটকে রাখা হয়েছিল।
ফ্রান্স টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, মুক্তি পাওয়ার পর রাজধানী বামাকোর নিজ নিজ বাড়িতে ফিরেছেন ক্ষমতাচ্যুত দুই নেতা।
তাদের পরিবারের সদস্যরাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এর আগে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেনা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘মধ্যরাতে মুক্তি দেয়া হয়েছে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে। এর মাধ্যমে নিজেদের দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি আমরা।’
কী শর্তে দাও-উয়ানেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে এক দিন আগেই আটক অবস্থায় ‘তারা পদত্যাগ করেছেন’ বলে দাবি করেছে মালির সেনাবাহিনী। এর ধারাবাহিকতায় বুধবার রাষ্ট্রক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেন সাবেক অভ্যুত্থানকারী সেনা কর্মকর্তা কর্নেল আসিমি গোইতা।
প্রতিক্রিয়ায় বিষয়টি ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ।
গত বছরের আগস্টে সেনা অভ্যুত্থানের পর কর্নেল আসিমি গোইতা। ছবি: এএফপি
গোইতার দাবি, নতুন সরকার গঠনের আলোচনায় প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী ব্যর্থ হওয়ায় এ পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
সরকারের বিভিন্ন পদে রদবদলের পর আটক করা হয়েছিল প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীকে।
গত বছরের আগস্টে দেশটির সাবেক স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বুবাকার কেইতার বিরুদ্ধে সফল অভ্যুত্থানে অংশ নেন কর্নেল গোইতাসহ দুই শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা। রদবদলে তাদেরই সরিয়ে দেয় দাও-উয়ানে সরকার।
কেইতার অপসারণকে মালির সাধারণ জনগণ স্বাগত জানালেও অন্তর্বর্তী সরকারে সেনাবাহিনীর প্রভাব বিস্তার নিয়ে ক্ষোভ দানা বাঁধছিল দেশটিতে। এ ছাড়া নতুন সরকারের দেয়া সংস্কারের আশ্বাসের বাস্তব প্রতিফলন ঘটছিল না মালিতে।
দাও-উয়ানেকে আটকের পরপরই যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ফ্রান্স, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আফ্রিকান ইউনিয়ন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে আটকের ঘটনার নিন্দা জানায়। তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে মালির সেনাবাহিনীর প্রতি বারবার চাপ দিচ্ছিল পক্ষগুলো।
নতুন নির্বাচন
১৮ মাসের মধ্যে পূর্ণ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছিলেন দাও-উয়ানে।
তাদের ক্ষমতাচ্যুত করার পর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছরই সাধারণ নির্বাচন দেয়ার কথা জানিয়েছেন কর্নেল আসিমি গোইতা।
সন্ত্রাসী তৎপরতা বাড়ার শঙ্কা
২০১২ সালের সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে কট্টরপন্থিরা ঘাঁটি গাড়ে মালির উত্তরাঞ্চলে। ২০১৩ সালে ইব্রাহিম কেইতা প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিলেও অঞ্চলটিতে স্থিতিশীলতা ফেরেনি।
ফ্রান্সের সেনাবাহিনী মালিতে শান্তিরক্ষার দায়িত্ব নিলেও সন্ত্রাসী হামলা অব্যাহত আছে।
দ্বিতীয় অভ্যুত্থানের ফলে মালিতে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন আল-কায়েদা ও আইএসের তৎপরতাও বাড়বে বলে শঙ্কা জোরালো হচ্ছে।
দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ও বেসামরিক মানুষের ওপর হামলা আরও বাড়বে বলেও মনে করা হচ্ছে।