সংঘাতকবলিত সিরিয়ায় টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন বাশার আল-আসাদ।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৯৫ শতাংশের বেশি ভোটে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে তার দল।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বুধবারের ভোটের পর বৃহস্পতিবার ফল ঘোষণা করেন সিরীয় পার্লামেন্টের প্রধান হামুদা সাবাগ।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, প্রায় দেড় কোটি মানুষের দেশটিতে এবারের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল রেকর্ড ৭৮ শতাংশের বেশি।
জয়ের প্রতিক্রিয়ায় আসাদ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ও ফল প্রকাশের পর এটা স্পষ্ট যে এক দশকের বহুমুখী সংঘাতের মধ্যেও দেশ ঠিকভাবেই চলেছে।
গৃহযুদ্ধ, জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের ধ্বংসযজ্ঞ ও পরবর্তীতে বিভিন্ন বহিঃশক্তির রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে সিরিয়া।
২০১১ সাল থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে দেশটিতে চার থেকে ছয় লাখ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে বলে বিভিন্ন পক্ষের তথ্যে উল্লেখ রয়েছে। গৃহহীন হয়েছেন এক কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষ; অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ।
সিরিয়ার বিরোধী দলগুলো, জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলোর অভিযোগ, ভোট জালিয়াতি করে সরকারের মেয়াদ বাড়িয়েছেন আসাদ।
সিরিয়ায় নতুন সংবিধান তৈরি ও রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অধীনে নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিল জাতিসংঘ। যদিও শেষ পর্যন্ত এ অনুরোধ রাখেনি আসাদ সরকার।
এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনের আগেই আসাদ সরকারের সমালোচনা করে বিবৃতি দেন ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। তারা বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না।
সিরিয়ার প্রতিবেশী ও আসাদ সরকারের বিরোধীপক্ষ তুরস্কও এ নির্বাচনকে অবৈধ আখ্যা দিয়েছে।
জয় নিশ্চিত হওয়ায় ৫৫ বছর বয়সী আসাদ আরও কমপক্ষে সাত বছর থাকবেন ক্ষমতায়।
অর্থাৎ সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের শাসনকালের মেয়াদ হতে যাচ্ছে প্রায় ছয় দশক। ৩০ বছর দেশ শাসন করা বাবা হাফিজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর ২০০০ সাল থেকে সিরিয়ার ক্ষমতায় আছেন বাশার আল-আসাদ।
নির্বাচনে আসাদের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক উপমন্ত্রী আব্দাল্লাহ সালুম আব্দাল্লাহ ১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং সরকারিভাবে নিষিদ্ধ বিরোধীদলীয় নেতা মাহমুদ আহমেদ মারি ৩ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
ভোট বর্জন করেছিল তেলসমৃদ্ধ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুর্দি বাহিনী ও উত্তর-পশ্চিমে বিদ্রোহী অধ্যুষিত শেষ অঞ্চল ইদলিব। প্রহসনের নির্বাচনের বিরোধিতায় বুধবার ভোটের দিনে বিক্ষোভ মিছিলও করেন অঞ্চল দুটির হাজারো মানুষ।
আর জয় নিশ্চিতের পর বৃহস্পতিবার আনন্দ মিছিল করেন আসাদ সমর্থকরা।
১০ বছরের যুদ্ধে দেশের ৭০ শতাংশ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়া আসাদ সরকারের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অর্থনীতি পুনরুদ্ধার।
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, প্রতিবেশী লেবাননের অর্থনীতিতে ধস, করোনাভাইরাস মহামারি ও লকডাউন, মিত্র রাশিয়া ও ইরানের কাছ থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ না পাওয়াসহ নানা কারণে আর্থিক সংকটে জর্জরিত সিরিয়া।