ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতির শুরু থেকে ইয়াসের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধারকাজ এবং ত্রাণের জন্য প্রাথমিক নির্দেশ দিয়ে তবেই নবান্ন ছেড়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রায় ৩০ ঘণ্টা নবান্নে থেকে তিনি আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন, প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন, জেলাশাসকদের ফোন করে ইয়াস মোকাবিলার প্রস্তুতির খবর নিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য প্রশাসনের তৎপরতার ফলও মিলেছে। শুধু প্রশাসনের সতর্কতা উপেক্ষা করে পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরে মাছ ধরতে গিয়ে একজনের মৃত্যু ছাড়া ইয়াসে আর কোনো মৃত্যুর খবর নেই।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের সংকটের মধ্যে ইয়াসের তাণ্ডব সামলানো কঠিন ছিল। গতবারের আম্পানের শিক্ষা নিয়ে ১৫ দিন আগে থেকে বারবার রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন আধিকারিকদের সঙ্গে, এসপি, ডিএম ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করে ইয়াস মোকাবিলায় রাজ্যের প্রস্তুতির প্রতিমুহূর্তের খবর সংবাদমাধ্যমের সাহায্যে মানুষকে যেমন জানাচ্ছিলেন, তেমনি সতর্কও করছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজে উপান্নের কন্ট্রোল রুমে উপস্থিত থেকে সব নজরদারি করেছেন।
রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীর তৎপরতায় প্রাণহানি এড়ানো গেছে। পূর্ব মেদিনীপুর এবং দুই চব্বিশপরগনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে এটাই স্বস্তির খবর ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইয়াস মোকাবিলার প্রস্তুতি দেখতে নবান্নে আসেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। তাকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কন্ট্রোল রুমে যান। পরে নবান্নের ১৪ তলায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে প্রায় ৪০ মিনিট বৈঠক করেন রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী ।
রাজ্যপাল চলে গেলে কন্ট্রোল রুমে চলে যান মুখ্যমন্ত্রী। গভীর রাত পর্যন্ত ইয়াস মোকাবিলার প্রস্তুতিতে কোথাও যাতে কোনো ফাঁক না থাকে, সে জন্য বারবার ফোন করে ডিএম, এসপি, আধিকারিকদের নির্দেশ দিতে থাকেন, খবর নিতে থাকেন প্রস্তুতির। বুধবার ইয়াসের তাণ্ডব চলাকালীন আধিকারিকদের থেকে প্রতিমুহূর্তের খবর নেন ।
ঝড় থামার পর বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রাথমিকভাবে কোন অঞ্চলে কত ক্ষতি হয়েছে, তা জেনে নেয়ার পাশাপাশি উদ্ধার ও ত্রাণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন ।
এরপর নবান্নে সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক করার পর বিকেল সোয়া ৪টা নাগাদ যখন নবান্ন ছাড়েন মমতা তখন ৩০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে।
রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় রাজ্যের ইয়াস মোকাবিলার প্রশংসা করেন। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও ইয়াস মোকাবিলায় রাজ্যের তৎপরতার প্রশংসা করেছেন ।
মুখ্য সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার নবান্নে জানান, শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী আকাশপথে সাগরে যাবেন। যাওয়ার পথে উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশপরগনার সুন্দরবন এলাকা পরিদর্শন করবেন। এরপর সাগরে গিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন।
কাথি, রামনগর, নন্দীগ্রাম, দেশপ্রাণসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল পরিদর্শন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীঘায় প্রশাসনিক বৈঠকে ইয়াসের তাণ্ডবের ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা করবেন।