করোনাভাইরাস শনাক্তে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকর পিসিআর পরীক্ষা। তবে গবেষকরা বলছেন, বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেয়া ভাইরাসটি শনাক্তে অন্যতম অস্ত্র হতে পারে চার পায়ের একটি প্রাণী।
তাদের বক্তব্য, শনাক্তের নির্ভুলতায় না পারলেও গতির জায়গায় পিসিআর টেস্টকে হারিয়ে দিয়েছে প্রাণীটি। কোভিড-১৯ শনাক্তে সবশেষ অস্ত্রটি অতুলনীয় ঘ্রাণশক্তির প্রাণী কুকুর।
সোমবার প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তরা একধরনের স্বতন্ত্র গন্ধ ছড়ায়, যা উচ্চ প্রশিক্ষিত কুকুর ৯০ শতাংশের বেশি ক্ষেত্রে নির্ভুলভাবে শনাক্ত করতে পারে।
কুকুরের ঘ্রাণশক্তির ক্ষমতা নিয়ে অনেক দিন ধরেই কোনো প্রশ্ন নেই। মানুষ যেখানে ৫ মিটারের মধ্যে থাকা জিনিসের ঘ্রাণ পায়, কুকুরের ক্ষমতা সেখানে ৩০০ মিটার। অসাধারণ ঘ্রাণশক্তির জন্য প্রাণীটিকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়।
দ্য গার্ডিয়ান র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চিকিৎসার ক্ষেত্রে ২০০৮ সাল থেকে কুকুর ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রাণীটি ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি ক্যানসার শনাক্ত করতে পারে বলেও প্রমাণ মিলেছে।
এখন লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের (এলএসএইচটিএম) গবেষক দল বলছে, করোনা শনাক্তেও কুকুরকে ব্যবহার করা যাবে।
পিয়ার পর্যালোচনার অপেক্ষায় থাকা গবেষণাটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ছয়টি কুকুর। নমুনা হিসেবে তাদের দেয়া হয় করোনায় সংক্রমিত ও অসংক্রমিতদের টি-শার্ট, মোজা ও মাস্ক।
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কুকুরগুলো ৯৪ দশমিক ৩ শতাংশ ক্ষেত্রে সংক্রমিতদের পোশাক শুঁকে করোনা শনাক্ত করতে পারে। যেখানে পিসিআর পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৯৭ দশমিক ২। আর সাধারণ পরীক্ষাগুলোয় এই হার ৫৮-৭৭।
সেই হিসাবে শনাক্তের নির্ভুলতায় না পারলেও গতিতে পিসিআর পরীক্ষাকে হারিয়ে দিয়েছে কুকুর। কারণ প্রাণীটি এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে করোনা শনাক্ত করতে পারে।
সহযোগী গবেষক লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের অধ্যাপক জেমস লোগান বলেন, ‘এর মধ্যে লক্ষণ ছাড়া এবং খুবই কম লক্ষণ থাকা ব্যক্তিও অন্তর্ভুক্ত।’
তবে নির্ভুলতার হার অনেক ভালো হলেও কুকুর কখনো পিসিআর পরীক্ষার বিকল্প হতে পারে না বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
তারা জানান, এগুলো বিমানবন্দরগুলোর জন্য কার্যকর হতে পারে। যেখানে তারা পিসিআর পরীক্ষা করা আবশ্যক- এমন যাত্রীর পাশাপাশি কাদের কোয়ারেন্টিনে রাখতে হবে তা শনাক্ত করবে।
জেমস লোগান এএফপিকে বলেন, ‘কুকুর যেকোনো পরীক্ষার থেকে দ্রুত করোনা শনাক্ত করতে পারে। সেক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ, কুকুর প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করবে। এরপর তাদের বাধ্যতামূলক পিসিআর পরীক্ষা করা হবে।’
কুকুর দিয়ে করোনা শনাক্তের চ্যালেঞ্জও রয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো প্রশিক্ষণের সময়। একটি কুকুরকে প্রশিক্ষণ দিতে ৮ থেকে ১০ সপ্তাহ সময় লাগে।
এ ছাড়া সংক্রমিত ও অসংক্রমিত ব্যক্তিদের পোশাক সংগ্রহ করাও বেশ কষ্টসাধ্য।
এ কারণে কুকুরগুলো যে গন্ধ থেকে করোনা শনাক্ত করছে, তা বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যাতে নির্দিষ্ট গন্ধটি তৈরি করে আরও বেশি দ্রুত কুকুরকে প্রশিক্ষণ দেয়া যায়।
ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, লেবাননসহ বেশ কিছু দেশ এরই মধ্যে বিমানবন্দরে যাত্রীদের করোনা শনাক্তে কুকুর ব্যবহার করা নিয়ে কাজ শুরুও করেছে।