ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় উত্তর প্রদেশ রাজ্যে মোহাম্মদ শাকির নামের এক গরুর মাংস বিক্রেতাকে পিটিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত।
মারধরকারীদের নেতৃত্ব দেয়া মনোজ ঠাকুর নিজেকে ‘গোরক্ষক’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন।
উত্তর প্রদেশের মোরাদাবাদ জেলার এক গ্রামে ঘটনাটি ঘটে বলে এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
হামলাকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন শাকিরের ভাই।
মামলার এজাহারে বলা হয়, স্কুটারে চড়ে ৫০ কেজি গরুর মাংস নিয়ে যাচ্ছিলেন শাকির। ওই সময় মনোজ ঠাকুর ও তার সহযোগীরা তার গতিরোধ করেন। তারা শাকিরের কাছ থেকে ৫০ হাজার রুপি দাবি করেন। পুলিশের কাছে যেতে নিষেধ করে একপর্যায়ে শাকিরকে মারধর শুরু করেন তারা।
অন্যদিকে হামলাকারীরাও শাকিরের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করে। মামলায় শাকিরের বিরুদ্ধে ‘প্রাণী হত্যার মাধ্যমে অপকর্ম’, ‘সংক্রমণ ছড়ানোর মতো অপরাধ’ ও ‘কোভিড সংশ্লিষ্ট লকডাউনের নির্দেশনা লঙ্ঘনের’ অভিযোগ আনা হয়।
মোরাদাবাদের কাটঘর থানার এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পাল্টা মামলায় শাকিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে কারাগারে নেয়া হয়নি। কারণ তার বিরুদ্ধে মামলা ‘জামিনযোগ্য’।
আহতের পরিবার এনডিটিভিকে জানিয়েছে, বাড়িতেই চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন শাকির।
সোমবার দুপুরে মোরাদাবাদ পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ছয় আসামির মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুজন পলাতক। শাকিরকে হামলায় নেতৃত্ব দেয়া মনোজ ঠাকুরকে এখনও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
মোরাদাবাদ পুলিশের প্রধান প্রভাকর চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মাংস বিক্রেতাকে পেটানোর ভিডিও আমাদের হাতে এসেছে। আমরা একটি মামলা করেছি। পলাতক আসামিদের দ্রুতই গ্রেপ্তার করা হবে।’
মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, ঠাকুর ও তার সহযোগীরা শাকিরকে ঘিরে রয়েছেন। এরপর মাটিতে পড়ার আগ পর্যন্ত তাকে লাঠি দিয়ে পেটান ঠাকুর।
এদিকে মোরাদাবাদ জেলা সাংবাদিকদের কাছে এক বিবৃতি পাঠান ঠাকুর।
এতে বলা হয়, ‘আমরা ওই ব্যক্তিকে (শাকির) থামানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তিনি তার গাড়ি দিয়ে আমাদের ধাক্কা দেন। দুই লাঠি দিয়ে এক ব্যক্তিকে আঘাত করা অপরাধ। কিন্তু কাউকে হত্যার চেষ্টা করা কি অপরাধ নয়?
‘আমি কসাইকে থামানোর চেষ্টা করেছিলাম। এখন পুলিশ উল্টো আমাকে হুমকি দিচ্ছে। প্রশাসন আমাকে পুলিশের একটি দল দিলে ওই চক্রকে খুঁজে বের করব আমি।’
এদিকে গরুর মাংস বিক্রেতার ওপর হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন অনেকে।
মোরাদাবাদের সমাজবাদী পার্টির সংসদ সদস্য এস টি হাসান বলেন, ‘শুনেছি, তিনি (শাকির) ফ্যাক্টরি থেকে মাংসগুলো নিয়েছেন। তার সঙ্গে রসিদও ছিল। তা সত্ত্বেও তাকে পেটানো হয়েছে। আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি খুন হননি।’
অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান হাসান।