করোনা সংকটের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আছড়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গত বছরের আম্ফান থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন থেকে রাজ্য প্রশাসনে সবোর্চ্চা তৎপরতা শুরু হয়েছে।
এরই মধ্যে নবান্নের পাশে উপান্নতে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ২৫ মে রাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় নিজে কন্ট্রোলরুমে উপস্থিত থেকে সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখবেন বলে জানা গেছে।
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের খবর অনুযায়ী, আগামী ২৬ মে বিকেলের দিকে স্থলভাগের আঘাত হানতে পারে ইয়াস। পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে সুন্দরবন ও দিঘার মধ্যে এই ঝড় আছড়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি।
আর এই ধরনের সাইক্লোন মোকাবিলায় প্রশাসনিক সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শনিবার ক্যাবিনেট সচিবের সঙ্গে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠক করেন।
বৈঠকে রাজ্য সরকার কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে এবং কেন্দ্র কী ভাবে সাহায্য করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
শনিবার সকালে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হয়। রোববারের মধ্যে তা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। সোমবার তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরবর্তী ২৪ ঘন্টায় তা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। বুধবার সকালে পশ্চিমবঙ্গ উড়িষ্যা উপকূলে পৌঁছবে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস।
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর, ইয়াসের দাপট সম্ভবত আম্ফানের থেকে কম হবে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তাল হতে পারে সমুদ্র। রোববার থেকে মৎস্যজীবীদের সমুদ্র যেতে নিষেধ করা হয়েছে। যারা সমুদ্রে আছেন তাদের রোববারের মধ্যে ফিরে আসতে বলা হয়েছে। ২৫ মে থেকে বৃষ্টি শুরু হবে রাজ্যে। ২৬ মে থেকে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে। ১০০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইতে পারে।
কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় অতীন ঘোষ, দেবাশীষ কুমার ও পুরো কর্মকর্তাদের নিয়ে শনিবার ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। তৈরি রয়েছে কলকাতা পুলিশও। তৈরি ডিসি কমব্যাটের অধীনে ২২টি বিপর্যয় মোকাবিলা দল। প্রত্যেকটি দলে পাঁচজন করে সদস্য রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় এই বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর মহড়াও শুরু হয়েছে।
প্রস্তুত রাখা হয়েছে গাছ কাটার অত্যাধুনিক যন্ত্র। ঝড়ে গাছ পড়ে গেলে যাতে দ্রুত সরিয়ে ফেলা যায়। গঙ্গায় রিভার ট্রাফিক পুলিশ সতর্ক রয়েছে ।
পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী গ্রামগুলোতে সতর্কতামূলক প্রচার অভিযান চালাচ্ছে বিপর্যয় মোকাবিলার বাহিনী বা এনডিআরএফ। হাসনাবাদ, সন্দেশখালি, গোসাবা, কাকদ্বীপ, সাগর, দিঘা, রামনগর, ডায়মন্ড হারবার, কলকাতায় ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বিপর্যয় বাহিনী মোতায়েন রাখা হয়েছে।
২৫০টি স্কুল-কলেজকে অস্থায়ী শরণার্থী শিবির করা হয়েছে। উপকূল বরাবর চলছে মাইকে সতর্কতা প্রচার।
সতর্কতা হিসেবে ২৫ থেকে ২৭ মে ভুবনেশ্বর হাওড়া স্পেশাল ট্রেন বাতিল করে দেয়া হয়েছে। আগেরবারের অভিজ্ঞতা থেকে ঝড়ের তাণ্ডব থেকে বাঁচাতে ট্রেনগুলোকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় রেল। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সরকারি কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
২০টি স্যাটেলাইট ফোন, ২৫টি ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চলবে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গেছে।