মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেতা অং সান সু চি ভালো আছেন বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সু চি আদালতে হাজির হবেন বলেও জানান তিনি।
হংকংভিত্তিক ফিনিক্স টেলিভিশনে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুই ঘণ্টার সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে জান্তাপ্রধান ওই সব মন্তব্য করেন বলে রয়টার্স ও বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচিত নেতা সু চিকে সরিয়ে সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতায় বসেন দেশটির সেনাপ্রধান হ্লাইং। অভ্যুত্থানের পর এই প্রথম টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিলেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাক্ষাৎকারটির অংশবিশেষ শনিবার প্রকাশ করা হয়।
সাক্ষাৎকারে হ্লাইং বলেন, ‘অং সান সু চি ভালো আছেন। তিনি বাসাতেই অবস্থান করছেন। কয়েক দিনের মধ্যে তাকে আদালতে দেখা যাবে।’
সু চির রাজনৈতিক অর্জন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জান্তাপ্রধান বলেন, ‘সংক্ষেপে বলতে গেলে তিনি তার সাধ্যমতো করেছেন।’
মিয়ানমারকে ঘিরে পরিকল্পনা কী, এমন প্রশ্নের জবাবে হ্লাইং বলেন, ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র ও কনফেডারেশনের ওপর ভিত্তি করে ফেডারেল স্টেট গঠন করতে চাই আমরা। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আগামী এক বছরের মধ্যে এটি করা সম্ভব বলে আশা করি। তা যদি না হয়, ছয় মাসের জন্য আমরা এটি স্থগিত করব।’
ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সু চিকে গৃহবন্দি করার পর তাকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ফৌজদারি অভিযোগ আনে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার।
এগুলোর মধ্যে গত বছর নির্বাচনি প্রচার চলাকালে করোনাভাইরাসের প্রটোকল ভাঙার মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আইন লঙ্ঘন, বেআইনিভাবে আমদানি করা ছয়টি ওয়াকিটকি রাখা অন্যতম।
তবে সু চির বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর যে অভিযোগ সেনা সরকার আনে তা হলো, মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী এই নেতা উপনিবেশ আমলের অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট লঙ্ঘন করেছেন।
আইনি প্রক্রিয়ার বিলম্ব শেষে সোমবার প্রথম আদালতে হাজির হওয়ার কথা সু চির।
মিয়ানমারের সেনা সরকারের হাতে গৃহবন্দি অং সান সু চি। ছবি: এএফপি
এনএলডিকে বিলুপ্তির হুমকি
এদিকে ২০২০ সালের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে শুক্রবার সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসিকে (এনএলডি) বিলুপ্ত করার হুমকি দেয় মিয়ানমারের জান্তা সরকার।
দেশটির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের প্রধান থেইন সো বলেন, নভেম্বরের নির্বাচনের ফল নিয়ে তদন্তকাজ প্রায় শেষ।
স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা ভিডিওতে থেইন সো বলেন, ‘বেআইনি কাজ করা এনএলডিকে নিয়ে আমাদের কী করা উচিত? দলটিকে বিলুপ্ত করা উচিত, নাকি বেআইনি কাজে জড়িত দলটির দেশদ্রোহী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা উচিত? এ বিষয়ে ভেবেচিন্তে ব্যবস্থা নেব আমরা।’
রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সম্ভাব্য পরিবর্তন নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে শুক্রবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশন। তবে বৈঠকে এনএলডির কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।
সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার। দেশটির অর্থনীতির চাকা প্রায় বন্ধ।
স্থানীয় তদারকি সংস্থা অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্সের (এএপিপি) তথ্য অনুয়ায়ী, সেনাশাসনের অবসান ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নেয়া হাজার হাজার মিয়ানমারবাসীর মধ্যে আট শতাধিক ব্যক্তি এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছে।