বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গাজায় অস্ত্রবিরতির পর অবরুদ্ধ জেরুজালেমের ফিলিস্তিনিরা

  •    
  • ২২ মে, ২০২১ ১৩:৪৫

চারটি পরিবারকে নিজ বাড়িতে ইসরায়েলি সেনারা অবরুদ্ধ করে রেখেছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। তারা জানান, প্রতিটি বাড়ির বাইরে পাহারা দিচ্ছে তিন-চারজন ইসরায়েলি সেনা। বাসিন্দারা ঘর থেকে বের হলেই তাদের পেটানোর হুমকি দিচ্ছে সেনারা।

দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত শেখ জারাহ এলাকা অবরোধ করে রেখেছে ইসরায়েলি সেনারা। ওই এলাকা থেকে কাউকে ঢুকতে বা বের হতে দেয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ জারাহ এলাকার চারদিকে কঠোর প্রহরায় রয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। গাজা উপত্যকায় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শাসক দল হামাস ও ইসরায়েলের অস্ত্রবিরতি কার্যকরের আগে থেকেই এমন পরিস্থিতি সেখানে।

এলাকাটির ফিলিস্তিনি বাসিন্দা ৭১ বছর বয়সী আব্দেলফাতাহ ইসকাফি বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই বাইরের কাউকে এলাকায় ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েলের পুলিশ। ফিলিস্তিনি বাসিন্দারাও সহজে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। কারণ একবার এলাকা ছেড়ে বের হলে বেশিরভাগ সময়েই তাদের আর ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।’

বেসামরিক আবাসিক এলাকাটিকে সামরিক এলাকা দাবি করে প্রশাসনের নির্দেশপত্র আছে বলে দাবি করছে ইসরায়েলের সেনারা।

অবশ্য ইহুদি দখলদাররা নিরাপদেই ঘোরাফেরা করছে বলেও জানান ইসকাফি।

তিনি বলেন, ’২০-২৫ জনের দল করে সশস্ত্র ইহুদিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে এখানে। ফিলিস্তিনিদের তাচ্ছিল্য করছে, উসকে দেয়ার চেষ্টা করছে। এই উগ্রবাদীদের ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারি না আমরা।’

আরেক ফিলিস্তিনি বাসিন্দা কারমেল কাশেম বলেন, ‘ইসরায়েলের নিরাপত্তা চৌকিগুলো স্থায়ীভাবে এখানে বসানো হয়েছে কি না, সেটাই এখন আমাদের সবচেয়ে বড় ভয়। ইদানীং আমাদের পরিচয়পত্র দেখতে চায় ইসরায়েলের সেনারা। নিজেদের বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলেও রক্ষা নেই।’

সম্প্রতি ইসরায়েলের বিভিন্ন দখলদার প্রতিষ্ঠানের করা মামলায় শেখ জারাহ এলাকায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ শুরু হয়। এর জেরে চলতি মাসের শুরুতে সেখানে ব্যাপক বিক্ষোভ করে ফিলিস্তিনিরা।

উত্তেজনা গড়ায় পবিত্র আল-আকসা মসজিদ পর্যন্ত। রমজান মাসজুড়ে সেখানে দফায় দফায় অভিযান চালায় ইসরায়েলি সেনারা। সংঘর্ষে আহত হয় কয়েক শ মুসল্লি।

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমালোচনা ও চাপের মুখে ইসরায়েলের একটি আদালতের নির্দেশে গত ৯ মে চারটি ফিলিস্তিনি পরিবারকে উচ্ছেদের সময় পেছানো হয়। ৩০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে নতুন শুনানি হবে।

চারটি পরিবারকেই নিজ বাড়িতে ইসরায়েলি সেনারা অবরুদ্ধ করে রেখেছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। তারা বলেন, প্রতিটি বাড়ির বাইরে পাহারা দিচ্ছে তিন-চারজন ইসরায়েলি সেনা। বাসিন্দারা ঘর থেকে বের হলেই তাদের পেটানোর হুমকি দিচ্ছে সেনারা।

এমন পরিস্থিতিতেই ২০১৪ সালের পর গত প্রায় দুই সপ্তাহে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী আক্রমণের শিকার হয় অবরুদ্ধ গাজার বাসিন্দারা।

উপত্যকায় ক্ষমতাসীন, স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস আল-আকসা থেকে সরে যাওয়ার হুঁশিয়ারি হিসেবে ইসরায়েলের দিকে রকেট ছোড়ে। জবাবে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের কাছে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে বিবেচিত গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে গাজা ও পশ্চিম তীরে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।

১০ থেকে ২০ মে পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর এসব বিমান হামলায় প্রাণ গেছে ৬৫ শিশুসহ ২৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনির। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০০ জন নারী রয়েছে। আহত দুই হাজারের বেশি। ভিটেমাটি হারিয়েছে এক লাখের বেশি মানুষ।

১১ দিনের সহিংসতার পর বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে অস্ত্রবিরতি কার্যকর হলেও এরপরও আল-আকসায় অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা।

গত রোববার শেখ জারাহ এলাকার একটি রাস্তায় দেয়া ব্যারিকেডে গাড়ি তুলে দেয়ায় ফিলিস্তিনি চালককে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ।

ইসরায়েলি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইআর আমিম গত বুধবার এক বিবৃতিতে জানায়, শেখ জারাহর পূর্ব অংশের কেরেম আল-আজোনি প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ঘিরে রেখেছে ইসরায়েলের পুলিশ। এলাকাটিতে ঢোকার পথে পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করছে। জোরপূর্বক উচ্ছেদের ঝুঁকিতে রয়েছে সেখানকার কয়েক শ ফিলিস্তিনি।

শেখ জারাহর ফিলিস্তিনিদের ওপর নিপীড়নের অনেক তথ্যও তুলে ধরা হয় বিবৃতিতে। এসব পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলেও মন্তব্য করা হয়।

গত সপ্তাহে ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম জানায়, পূর্ব জেরুজালেমে অস্থিরতা উসকে দেয়ার জন্য দেশটির পার্লামেন্ট নেসেটের সদস্য ইতামার বেন-ভির দায়ী বলে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে জানিয়েছে পুলিশ।

শেখ জারায় বেন-ভির আর জেরুজালেমের ডেপুটি মেয়র আরইয়ে কিংয়ের সমর্থক কট্টর ডানপন্থি কিছু উগ্রবাদীদের আনাগোনা বেড়েছে বলেও অভিযোগ আছে।

সম্প্রতি শেখ জারাহ এলাকা পরিদর্শনের সময় গুলিবিদ্ধ এক ফিলিস্তিনিকে তাচ্ছিল্য করে কিং বলেন, ‘দুঃখজনক হলো যে গুলিটা মাথায় লাগেনি।’

এ অবস্থায় অঞ্চলটিতে আবারও সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

এ বিভাগের আরো খবর