২০২০ সালে নতুন অভ্যন্তরীণ শরণার্থীর তালিকায় যোগ হয়েছে সাড়ে চার কোটি মানুষ। ফলে সারা বিশ্বে এখন অভ্যন্তরীণ শরণার্থীর সংখ্যা সাড়ে পাঁচ কোটির বেশি।
ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার (আইডিএমসি) ও নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের (এনআরসি) যৌথ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশে দেশে কঠোর লকডাউনের মধ্যেও যুদ্ধ-সংঘাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ১০ বছরের মধ্যে রেকর্ডসংখ্যক মানুষ বসতভিটা হারিয়েছেন গত বছর।
ফ্রান্স টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর সীমান্তপথে পালিয়ে ভিন দেশে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় দুই কোটি ৬০ লাখ। একই সময়ে নিজ দেশে গৃহহীনের তালিকায় যোগ হয়েছে এর দ্বিগুণ মানুষ।
আইডিএমসির পরিচালক অ্যালেক্সান্ড্রা বিলাক বলেন, ‘দুটি সংখ্যাই অস্বাভাবিক বেশি। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ শরণার্থীর সংখ্যা বেড়েছে নজিরবিহীন হারে। মহামারি পরিস্থিতিতে নানা চাপে সঠিকভাবে এ সংখ্যা তালিকাভুক্ত হয়নি, এমন শংকাও রয়েছে। সংক্রমণের ভয়ে অনেক মানুষই জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রে আসেননি, লকডাউনে চলাফেরায় বিধিনিষেধের কারণে অনেকে আসতে পারেননি।’
সবমিলিয়ে নতুন শরণার্থীর প্রকৃত সংখ্যা আসলে আরও বেশি হতে পারে, এমন শংকাও জানান তিনি।
এনআরসিপ্রধান জ্যান ইগিল্যান্ড বলেন, ‘একটি বছরের প্রতিটি সেকেন্ডে কেউ না কেউ বাড়িঘর হারিয়েছেন, নিজ দেশেই শরণার্থীর দলে যোগ দিয়েছেন- এমন তথ্য সত্যিই উদ্বেগজনক। বিশ্বের বিপুলসংখ্যক মানুষকে সংঘাত ও দুর্যোগ থেকে রক্ষায় আমরা ব্যর্থ হয়েছি।’
শরণার্থীদের মহামারি আরও বড় আর্থসামাজিক ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হতে থাকায় শরণার্থীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
নতুন অভ্যন্তরীণ শরণার্থীদের তিন-চতুর্থাংশই প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার। বেশিরভাগেরই বাস এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার সাহারা মরুভূমি অঞ্চলে মৌসুমের পরেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় গৃহহীন হয়েছেন কোটি মানুষ।
আর সংঘাত-সহিংসতা গৃহহীন করেছে প্রায় এক কোটি মানুষকে। এসবের কেন্দ্রে ছিল ইথিওপিয়া, মোজাম্বিক আর বুরকিনা ফাসো।
এছাড়া সিরিয়া, আফগানিস্তান ও কঙ্গো প্রজাতন্ত্রেও সহিংসতার কারণে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন অনেক মানুষ।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে আশ্রয় হারানো মানুষজন সময়ের সঙ্গে নিজ নিজ এলাকায় পুনর্বাসিত হলেও সহিংসতায় আশ্রয়হীনদের দুর্ভোগ দীর্ঘ হতে পারে বছরের পর বছর।