করোনায় মৃত্যুতে আবারও বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে ভারতে।
মঙ্গলবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দেয়া পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এক দিনে করোনায় মারা গেছেন ৪ হাজার ৩২৯ জন।
করোনায় বিশ্বে এক দিনে এখন পর্যন্ত এটাই রেকর্ড। সাত দিন আগে এই সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ২০৫। যা সেই সময় অনুযায়ী সর্বোচ্চ ছিল।
কিন্তু প্রশ্ন জাগছে অন্য ক্ষেত্রে। গত কয়েক দিনে ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশ কিছুটা কমেছে। সাধারণ হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যাও কমার কথা। কিন্তু দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পরিসংখ্যান বলছে উল্টো কথা। আক্রান্ত কমলেও বাড়ছে মৃত্যু।
গ্রামেও এখন থাবা বসিয়েছে করোনা। গ্রাস করছে একের পর এক পরিবার। অনেক পরিবারেই দেখা গেছে, কেউই আর বেঁচে নেই। অর্ধেকের বেশি গ্রাম ধুঁকছে জ্বরে। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এমনটাই বলা হচ্ছে এক প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরকারি পরিসংখ্যান যা বলছে, বাস্তবে তার থেকে অনেক বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন। অর্ধেক লোকের সংক্রমণ ধরাই পড়ছে না। তার আগেই মারা যাচ্ছেন। তার পর চিকিৎসকরা মৃত্যুর কারণ হিসেবে লিখে দিচ্ছেন অন্য কিছু। ধামাচাপা দিচ্ছেন কোভিডের কথা।
দিল্লি থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টার রাস্তা পেরিয়ে বাস্সী। উত্তরপ্রদেশের এই গ্রামে গত কয়েক দিনে অসুস্থ হয়েছেন সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ। যা ওই গ্রামটির মোট জনসংখ্যার এক–তৃতীয়াংশ।
গত তিন সপ্তাহে মারা গিয়েছেন ৩০ জন। গ্রামে কোনো চিকিৎসক নেই, স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই, অক্সিজেন নেই।
স্থানীয় কৃষক সংগঠনের নেতা সঞ্জীব কুমার জানান, বেশির ভাগেরই মৃত্যু হয়েছে অক্সিজেনের অভাবে। যাদের অবস্থার অবনতি হচ্ছে, তাদের জেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
যাদের সমস্যা বাড়ছে, তাদের চার ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে দূরে হাসপাতালে ভর্তি করানোর চেষ্টা চলছে। অনেকেরই মৃত্যু হচ্ছে পথে।
শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, গোটা দেশের গ্রামেই এই ছবি। একের পর এক গ্রাম উজাড় হয়ে যাচ্ছে। পরিবারের সকলেই মারা যাচ্ছেন। তার পর তাদের দেহ হয়তো ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে নদীতে। বহু গ্রামে ক্ষেত খালি পড়ে রয়েছে। কারণ কাজ করার লোক নেই।
দেশের বেশ কিছু রাজ্য থেকে কয়েক সপ্তাহ ধরে মৃত্যুহার বৃদ্ধির খবর আসছে। মহারাষ্ট্রে সোমবার মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ১৯ জনের। শনিবার থেকে সোমবারের মধ্যে মারা গেছেন ২৮৯ জন। এক সপ্তাহ আগে এই সংখ্যা ছিল ২২৭। এর আগের সপ্তাহে মৃত্যু হয়েছিল ৮৪৮ জনের।
অন্যান্য রাজ্যেও পরিস্থিতি এক। তবে হিসাবেও ভুল থাকছে। মার্চের মৃত্যু নথিভুক্ত হয়েছে এপ্রিলে এমনটা দেখা গিয়েছে কর্ণাটকে। মহারাষ্ট্রেও তেমন গড়মিল রয়েছে। এই মুহূর্তে পাঁচটি রাজ্য—মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুতে – প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে ৩০০ জনের মৃত্যু হচ্ছে। উত্তরাখণ্ডের মতো অপেক্ষাকৃত ছোট একটি রাজ্যে ২২৩ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে নথিভুক্ত সময়ের আগে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী এপ্রিল কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সবচেয়ে মারাত্মক মাস হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। ৬৬ হাজার ৮৬৬টি মৃত্যু দেখেছে এই মাসটি। শুধু মৃত্যু নয়, সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের দিক থেকেও। ৭০ লাখ মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এই মাসে।