বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গাজায় বোমা হামলায় ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের সমর্থন কেন?

  •    
  • ১৮ মে, ২০২১ ২০:২১

ভারতীয় সাংবাদিক ও লেখক রানা আইয়ুব তার এক টুইটার পোস্টে লেখেন, ‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইসরায়েলকে সমর্থন জানানো হয়েছে মুসলমানদের প্রতি পুষে রাখা বিদ্বেষ থেকে। এসব পোস্ট করার ক্ষেত্রে মুসলমানদের গণহত্যার শিকার হতে দেখার বাসনাও কাজ করেছে।’

পশ্চিম জেরুজালেমের শেখ জারাহ এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের চেষ্টা ও গাজা উপত্যকায় বোমা হামলা করায় বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় উঠেছে।

কিন্তু এর মধ্যেও ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) কিছু নেতা-কর্মী ও হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা গাজায় ইসরায়েলের হামলাকে সমর্থন করছেন। এমনকি তারা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর নিপীড়নেরও সাফাই গাইছেন।

মঙ্গলবার আল জাজিরার এক নিবন্ধে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলা ইসরায়েলি বিমান হামলায় অবরুদ্ধ গাজায় নিহত হয়েছেন ২১২ ফিলিস্তিনি, যাদের অন্তত ৬১ শিশু। আহত হয়েছেন প্রায় এক হাজার মানুষ। অন্যদিকে, দখলকৃত পশ্চিম তীরে উচ্ছেদের প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন ১৯ ফিলিস্তিনি।

গাজা থেকে ছোড়া ফিলিস্তিনিদের মুক্তি আন্দোলনের সংগঠন হামাসের রকেট হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১০ ইসরায়েলি, এদের মধ্যে দুই শিশুও রয়েছে।

Thank you for this show of solidarity. Even more powerful in light of Hindutva enthusiasts cheering on Israel’s genocidal campaign bc they see a model for Hindu supremacist sovereignty in it. #Solidarity #GazaUnderAttack #SaveSheikhJarrrah #Haifa #Lydd #Palestinians #Freedom https://t.co/Bxv3yAZXNe

— Noura Erakat (@4noura) May 17, 2021

সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, গত সপ্তাহ থেকেই গাজায় ইসরায়েলি হামলার সমর্থনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন ধরনের হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করছেন ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীরা।

এর মধ্যে রয়েছে ‘আইসাপোর্টইসরায়েল’, ‘ইন্ডিয়াউইথইসরায়েল’, ‘ইন্ডিয়াস্ট্যান্ডসউইথইসরায়েল’, ‘ইসরায়েলআন্ডারফায়ার’।

হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর সমর্থকদের করা পোস্টে ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের সংগঠনগুলোকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবেও আখ্যা দেয়া হয়েছে।

আল জাজিরা বলছে, শনিবার রাতে টুইটারে ভারত থেকে পোস্ট করা সবচেয়ে প্রচলিত হ্যাশট্যাগ ছিল ‘প্যালেস্টাইনটেরোরিস্টস’।

আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়ে পোস্ট করাদের বেশির ভাগই বিজেপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, এদের মধ্যে অনেক আইনজীবী ও সাংবাদিক রয়েছেন।

বুধবার এক টুইটার পোস্টে সংসদ সদস্য ও মুসলিমবিরোধী বক্তব্যের কারণে পরিচিত বিজেপি নেতা তেজস্বী সূর্য লেখেন, ‘আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। শক্ত থাকো, ইসরায়েল।’

ওই পোস্টটিতে লাইক দিয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ, শেয়ার হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার বার।

শুক্রবার চণ্ডীগড় শহরের বিজেপির মুখপাত্র গৌরভ গোয়েল ইসরায়েলি সেনাদের একটি ছবি দিয়ে টুইটার পোস্টে লেখেন, ‘প্রিয় ইসরায়েলিরা, আপনারা একা নন। আমরা ভারতীয়রা আপনাদের সঙ্গে আছি।’

হারদিক ভাসবার নামে এক টুইটার ব্যবহারকারীকে প্রায় দেড় লাখ মানুষ ফলো করেন। এদের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও রয়েছেন।

শনিবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আল জাজিরা ও এপির অফিস ধসে পড়ার ভিডিও শেয়ার করে তিনি লেখেন, ‘হ্যাপি দিওইয়ালি লিবারেলস।’ এরপরে হ্যাশট্যাগ হিসেবে ব্যবহার করেন ‘ইন্ডিয়াস্ট্যান্ডসউইথইসরায়েল’।

রোববার ভারতীয় সাংবাদিক ও লেখক রানা আইয়ুব তার এক টুইটার পোস্টে লেখেন, ‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইসরায়েলকে সমর্থন জানানো হয়েছে মুসলমানদের প্রতি পুষে রাখা বিদ্বেষ থেকে। এসব পোস্ট করার ক্ষেত্রে মুসলমানদের গণহত্যার শিকার হতে দেখার বাসনাও কাজ করেছে।’তথ্য, শাসনব্যবস্থা ও ইন্টারনেট নিয়ে কাজ করেন লেখক ও গবেষক শ্রীনিবাস কোদালি। তিনি বলেন, ‘হিন্দুত্ববাদীদের একটি অংশ শুধু মুসলমানরা মরছে বলেই ইসরায়েলি হামলাকে সমর্থন করে।’

তিনি বলেন, ‘মুসলমানদের প্রতি ঘৃণার কারণেই ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড এদের উল্লসিত করছে।’

উত্তর-ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনিদের মুক্তি সংগ্রামে বরাবরই সমর্থন জানিয়ে আসছিল ভারত। ১৯৮১ সালের ২৯ নভেম্বর ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে একটি ডাকটিকিটও প্রকাশ করে দেশটি।

১৯৩৮ সালে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, ‘ফিলিস্তিন শুধুই আরবদের, যেভাবে ইংল্যান্ড ইংরেজদের ও ফ্রান্স ফ্রেঞ্চদের।’

This is a call out:More Indians, both in India & the diaspora, must speak out in support of Palestine.This is a liberation struggle that you must support, especially as the connections Modi & Netanyahu and Hindutva nationalism & Zionism, continue to deepen.

— Arjun Sethi (@arjunsethi81) May 17, 2021

১৯৫০ সালে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয় ভারত। পরে ১৯৯২ সালে দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। তারপর থেকে এই সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। বর্তমানে ইসরায়েলি অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ভারত। ইসরায়েলের রপ্তানি করা অস্ত্রের ৪৬ শতাংশই কেনে দেশটি।

২০১৭ সালে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইসরায়েল সফরে যান নরেন্দ্র মোদি। দেশটির প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ‘বন্ধু’ বলেও সম্বোধন করেন তিনি।

#IndiainUNSCWatch 📺: PR @ambtstirumurti speaks at the Open Debate on Middle East@MEAIndia @indemtel @ROIRamallah pic.twitter.com/g1admWoaxP

— India at UN, NY (@IndiaUNNewYork) May 16, 2021

লেটার টু প্যালেস্টাইন: রাইটারস রেসপন্ড টু ওয়ার অ্যান্ড অকুপেশন-এর সম্পাদক বিজয় প্রসাদ বলেন, ‘ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতা-কর্মীরা ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো ইসরায়েলকে সমর্থন জানালেও এ বিষয়ে ভারতের সাধারণ জনগণের মনোভাব স্পষ্ট নয়।’

সোমবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধে সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন কয়েকজন লেখক, শিল্পী, শিক্ষক ও রাজনীতিক।

এর আগে রোববার জাতিসংঘের এক সভায় রাষ্ট্রীয়ভাবে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানায় ভারত। একে ‘লজ্জাজনক কূটনীতি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন বিজেপির হিন্দুত্ববাদী সমর্থকরা।

এ বিভাগের আরো খবর